ডেস্ক রির্পোট:- যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে যেন বের হয়ে আসতে পারছে না বিশ্ব। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সমগ্র বিশ্বকেই মারাত্মক এক অনিশ্চতায় ফেলে দিয়েছে। এরই মধ্যে ইসরায়েল-হামাস সংঘাত তথা ফিলিস্তিনের অধিকৃত গাজা অঞ্চলে ইসরায়েলের ধারাবাহিক হামলা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। এ সংঘাতকে ঘিরে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। এ পরিস্থিতিতেই যেন আগুনে ঘি ঢেলে দিল ইরান। দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেট ভবনে হামলার জের ধরে গত শনিবার ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় ইরান। ইসরায়েলে এটাই ইরানের প্রথম সরাসরি এ ধরনের হামলা। শনিবারের এ ঘটনার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়া নিয়ে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। যদিও সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়াতে তোড়জোড় চলছে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশ সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়াতে নেপথ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্বের আর কেউ যুদ্ধ চায় না বলে সতর্কও করে দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। এদিকে ইরানে পাল্টা হামলার বিষয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা। সোমবার এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষ হয়। যদিও এর আগে এক ইসরায়েলি মন্ত্রী ইরানকে সঠিক সময়ে জবাব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন। অন্যদিকে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলায় যুক্তরাষ্ট্র যোগ দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। খবর বিবিসি ও সিএনএনের।
গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে এ ভয়াবহ হামলায় ইরানের দুই শীর্ষ কমান্ডারসহ ১৩ জন নিহত হয়। সেদিনই এ ঘটনার কড়া জবাব দেওয়ার হুমকি দেয় ইরান। ইরান সেই হামলার দায় স্বীকার না করলেও এটা যে তেলআবিবেরই কাজ, সে বিষয়ে নিশ্চিত হয় তেহরান। এর প্রতিশোধ হিসেবে গত শনিবার ইসরায়েলে তিন শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় ইরান। এ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের ৯৯ শতাংশই ধ্বংসের দাবি করেছে ইসরায়েল। ইরান অবশ্য বলছে, হামলায় ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তথ্য স্বীকার করছে না ইসরায়েল।
এ হামলার পর ইরান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ইসরায়েল যদি এর পরে পাল্টা হামলা চালায়, তাহলে দেশটিতে আরও ভয়াবহ ধরনের হামলা চালানো হবে। অন্যথায় ইরানের হামলা এখানেই শেষ। সেইসঙ্গে ইরান যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে বলেছে, দেশটি যদি তেহরানও তেলআবিবের দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে নাক গলায় তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অবশ্য এরই মধ্যে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ফোনালাপে বলে দিয়েছেন যে, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলায় যোগ দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। তবে ইসরায়েলি মন্ত্রী বেনি গান্তজ বলেছেন, তার দেশ সঠিক সময়ে ইরানের এ হামলার জবাব দেবে। সোমবার এ বিষয়ে ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার বৈঠক অবশ্য কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়। বৈঠকে ইরানে পাল্টা হামলা নিয়ে বিভক্তি দেখা দেয়। মন্ত্রিসভার কোন কোন সদস্য পাল্টা হামলার পক্ষে। তবে সমসংখ্যক সদস্য এর বিরোধী বলে জানা যায়। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে ফের দুই দেশের মধ্যে হামলা ও পাল্টা হামলা শুরু হতে পারে মনে করে মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশই সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। তবে সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়াতে তোড়জোড়ও চলছে। বিশেষ করে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়াতে ইতোমধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছে। এ ছাড়া ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য ইসরায়েলকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত না করতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। তেলআবিবকে একই ধরনের বার্তা পাঠিয়েছে ফ্রান্সও। বিশ্বের বিভিন্ন দেশও ইসরায়েল-ইরান দুই পক্ষকেই উত্তেজনা পরিহারের আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্য খাদের কিনারে। এ অঞ্চলের মানুষ একটি পূর্ণমাত্রার ধ্বংসাত্মক সংঘাতের মুখোমুখি। তারা যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। এখনই সময় তাদের খাদের কিনার থেকে ফিরিয়ে আনার। আর এ দায়িত্ব যৌথভাবে সবার। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক জরুরি সভার শুরুতে দেওয়া ভাষণে গুতেরেস এসব কথা বলেন। স্থানীয় সময় রোববার বিকেলে ইসরায়েলের অনুরোধে ইরানের হামলা নিয়ে এ সভা শুরু হয়। এতে নিজ নিজ দেশের অবস্থানের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েল ও ইরানের রাষ্ট্রদূতরা। গুতেরেস তার বক্তব্যে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন দিকের বড় বড় সামরিক পক্ষগুলো সংঘাতে জড়িয়ে যেতে পারে, এমন যে কোনো পদক্ষেপ উপেক্ষা করা জরুরি। ইতোমধ্যে এখানকার বেসামরিক নাগরিকরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, তাদের (গাজাবাসী) চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। তাই এখনই সময়, সবাইকে যুদ্ধের কিনার থেকে ফিরে আনার। গুতেরেস বলেন, (ইরান-ইসরায়েল-গাজা) সংঘাত যাতে আবার উসকে না যায়, তা প্রতিরোধে সবার দায়িত্ব রয়েছে। সবাইকে সক্রিয়ভাবে এই দায়িত্ব পালনের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে। সবার যৌথ অংশগ্রহণে এখনই গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন উল্লেখ করে গুতেরেস বলেন, সেখানে মানবিক অবস্থা বিপর্যস্ত। এজন্য সব জিম্মিকে নিঃশর্ত মুক্তি ও বাধাহীনভাবে ত্রাণ তৎপরতা চালাতে দেওয়া দরকার। গুতেরেস তার বক্তব্যে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে সংঘাত বন্ধ ও লোহিত সাগরে নৌযান চলাচল পুনরায় স্বাভাবিক করা নিয়েও কথা বলেন। বিশ্বে শান্তি স্থাপনে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর যৌথ দায়িত্ব থাকার কথা উল্লেখ করে গুতেরেস আরও বলেন, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি-নিরাপত্তার অবস্থা প্রতি ঘণ্টায় অবনতি হচ্ছে। এ অঞ্চলের (মধ্যপ্রাচ্য) বা বিশ্বের কেউ আর যুদ্ধ চায় না।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com