রাঙ্গামাটি:- পাহাড়ের মানুষের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবি তথা বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক পালন করা হচ্ছে এবার সাড়ম্বরে। আলাদা নামে হলেও চাকমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা ও মারমা জাতিগোষ্ঠীর মানুষ একযোগে এ উৎসব পালন করে। চৈত্র সংক্রান্তিতে পুরাতন বছরকে বিদায় একই সঙ্গে নতুন বছরকে বরণ করতে পাহাড়ে এখন বৈসাবী উৎসবের আমেজ বইছে। দুই সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যাদের প্রতিটি ঘরে এখন আনন্দের বন্যা। ভোর থেকে সাঙ্গু নদীতে জলধারায় পানিতে ফুল ভাসিয়ে রঙ্গীন হয়ে উঠেছে পুরো পাহাড়।
প্রতি বছর বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে পাহাড়ে বসবাসরত ১৩ নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর উদ্যোগে বিজু, সাংগ্রাইং, সাংক্রান, সাংক্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, জল উৎসব ও বাংলা নববর্ষ উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে পালন করা হয়। তাই এবারও কমটি রাখেনি সম্প্রদায়ের মানুষজন। টানা তিন দিনব্যাপী পাহাড়ে শুরু হয়েছে উৎসবের আনন্দের আমেজ। ১২ এপ্রিল বৈসাবীর প্রথম দিন চাকমা, ত্রিপুরা, তংচঙ্গ্যা জাতি ফুল বিজু বৈসু কিংবা বিষু উৎসব । এদিন নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। পরদিন ১৩ এপ্রিল চৈত্র সংক্রান্তির দিনকে বলা হয় মূল বিজু, বৈসু, বা বিষু। এ দিন প্রতি ঘরে রান্না হবে ঐতিহ্যবাহী পাচন। ঘরে ঘরে চলে অতিথি আপ্যায়ন।
ভোর ছয়টা থেকে দুই সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর চাকমা ও তংঞ্চঙ্গ্যা বান্দরবানে সাঙ্গু নদীর তীরে ভিড় জমাচ্ছেন। এদিনে ছোট থেকে বড় সকল বয়সের নিজস্ব সংস্কৃতি পোশাক পরিধান করে পদচারণা মুখরিত হয়ে উঠে নদীর তীর। নানান ধরনের ফুল সাজাতে ব্যস্ত নর-নারীরা। সূর্যোদয়ের সময় নদীতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে নদীর ঘাটে ফুল দিয়ে পানির দেবতা গোঙামাকে পূজা দেওয়া হয়। এ ছাড়া সব দেব দেবীর উদ্দেশ্যে ভক্তি ও শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে কলা পাতায় করে ফুল নিয়ে নদী-খালে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। পুরানো বছরের গ্লানি মুছে দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করতে এই দিনটি পালন করে থাকেন এই সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর।
আর্থিনী চাকমা বলেন, সকাল থেকে সাঙ্গু নদীর ঘাটে পরিবার-পরিজন নিয়ে আসছি। পুরানো বছরে সব গ্লানি মুছে দিয়ে নতুন বছরকে বরণে মাধ্যমে ভালো কিছু আশা নিয়ে প্রার্থনা করেছি।
সুপ্রভা তংঞ্চঙ্গ্যা বলেন, মূলত আমাদের এই উৎসবকে বিষু বল হয়। এই দিনটি জন্য এক বছর অপেক্ষা করে থাকি। এছাড়া সাধ্য অনুসারে বিভিন্ন রকমের পিঠা তৈরি করে বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন এমনকি কারো সঙ্গে অতীতের বৈরিতা থাকলে এদিন একে অপরকে ক্ষমার মাধ্যমে নিজের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করি।
বাংলা নব বর্ষের প্রথম দিন চাকমারা বলে গজ্জ্যাপজ্জ্যা দিন, এদিনও মুল বিজুর আমেজ থাকে, মুরব্বি ও বয়স্কদের নিজ বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে উন্নত খাবার পরিবেশন করে আশীর্বাদ নেওয়া হয়। বিহারে ভিক্ষু সংঘকে উন্নত মানের খাদ্য ভোজন দান করা হয়, বাড়িতে বিকেলে পারিবারিক মঙ্গলের জন্য ধর্মীয় গুরুদের আমন্ত্রণ করে মঙ্গল সূত্রপাঠ শোনা হয়। তরুণ-তরুণীরা বয়স্কদেরকে গোসল করিয়ে আশীর্বাদ নেন।
এপ্রিল মাসে তিন পার্বত্য জেলায় মারমাদের সাংগ্রাইং, চাকমাদের বিজু, ত্রিপুরাদের বৈসু, তঞ্চঙ্গ্যাদের বিষু, ম্রোদের চাংক্রান পোয়ে, খুমী সম্প্রদায়ের সাংক্রাই, খেয়াং সম্প্রদায়ের সাংলান, চাক সম্প্রদায়ের সাংগ্রাইং খুমী সম্প্রদায়ের সাংক্রাই উৎসব পালন করে থাকেন।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com