ডেস্ক রির্পোট:- গত বছর বান্দরবানের কুকিচিনাদের দাবি-দাওয়ার প্রেক্ষিতে শান্তি আলোচনা শুরু হয়েছিল। এমনকি আলোচনায় ডেকে তাদের দাবি-দাওয়াকে গুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগও জানিয়েছিল তারা। হতে পারে এটা তাদের কৌশলের অংশ। যে কারণে ব্যাংক ডাকাতি ও ব্যাংক কর্মকর্তাকে অপহরণ করেছে তারা। এর বাইরেও তাদের পরিকল্পনায় আরও কিছু আছে কিনা তা আমরা এখনও জানি না।
শান্তি আলোচনার শেষ দুই বৈঠকে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন কেএনএফ সদস্যরা। এর আগে হয়েছিল ভার্চুয়াল বৈঠকও। ওই শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহ্বায়ক বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা মারমা। সম্প্রতি ক্য শৈ হ্লা মারমা বলছেন, “সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য গত বছর ২৯ মে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধির উপস্থিতিতে বান্দরবানের অরুণ সারকি টাউন হলে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। পরে জুন মাসে বিভিন্ন জাতিসত্তার সমন্বয়ে ১৮ সদস্য বিশিষ্ট শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করা হয়।”
এ বছরের মার্চ মাসের ৫ তারিখে বান্দরবানের রুমা উপজেলা সদরে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি ও কেএনএফের মধ্যে দ্বিতীয়বার সরাসরি বৈঠক হয়।
এই পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি প্রশ্ন তৈরি হয়। কার পরামর্শে তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা শুরু করেছিলেন? আর সেখানে অশান্তির মাত্রা কতটুকু ছিল আসলে? মাত্রা কী মণিপুরের মতো নাকি মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের মতো ছিল? তারপরও শান্তি আলোচনার ভালো উদ্যোগটি কেন ফলপ্রসূ হয়নি— ওই দিকটাও আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।
নাগরিক হিসাবে বমদের মৌলিক অধিকার সমুন্নত রাখা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আর সময়ের হিসাবে বম বা লুসাই বা কুকি বা মিজো বা চিনাদের এখন গুরুত্ব না দেওয়ার সময় নয়। প্রায় বছর ধরে চলমান ভারতের মণিপুরের ঘটনাটায় নজর দিলে বোঝা যাবে বিষয়টি। কারণ কুকি চিনাদের ইতিহাস আছে। ওই ইতিহাস জানা প্রয়োজন তাদের অতীত-বর্তমান হিসাব করেই।
কুকি, বম, চিন, মিজোরা ভারতীয় সীমানায় আসার পর থেকে এই অঞ্চলে তাদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে সামিল ছিল। তারা লড়াই করেছে ব্রিটিশদের সঙ্গে, ভারতের সঙ্গে। যে কারণে পেয়েছে ২১ হাজার ৬৭ বর্গ কিলোমিটারের মিজোরাম রাজ্য। মিয়ানমারের চিন রাজ্যেও তাদের বসতি রয়েছে, যার আয়তন ৩৬ হাজার ১৮ বর্গ কিলোমিটার। এছাড়াও ১০ থেকে ১৫ হাজার কুকি চিন জনগোষ্ঠী বাস করে বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে। এছাড়া তারা আছে মণিপুরে। আছে আসামের কাছাড়ে।
সম্প্রতি মণিপুরের ঘটনায় আমরা দেখেছি মেইতেদের সঙ্গে কি পরিমাণ শক্তি প্রদর্শন করেছে কুকিরা। মণিপুরে মেইতেরা সংখ্যাগুরু হবার পরও কুকি তথা মিজোরা মেইতেইদের ছেড়ে কথা বলেনি। সেনাবাহিনীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়াই করেছে। গাড়ি পুড়িয়েছে। সেনাবাহিনীর কয়েক হাজার অস্ত্র লুঠ করেছে এই গোষ্ঠী। মণিপুরে এই ঘটনার রেশ এখন শেষ হয়ে যায়নি। কিন্তু রাজ্যের ৬৫ শতাংশ সংখ্যাগুরু মেইতে জনগোষ্ঠী তুলনামূলক স্বল্প সংখ্যক কুকিদের দমাতে পারেনি। এমনকি প্রশাসন এবং সেনাবাহিনীও না। তারা ছিল নাছোড়বান্দা। লড়াই ছাড়তে রাজি ছিল না। মণিপুরে বছরব্যাপী এক যুদ্ধক্ষেত্র তৈরি করেছিল কুকিরা।
এর কারণ, কুকিদের সরকারি জায়গা থেকে সরানো হচ্ছিল। অন্যদিকে আইন পাশ করে মেইতেদের তপসিলি উপজাতি হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার কারণে তারা ক্ষুব্ধ হয়েছিল। মেইতে আর কুকিরা মণিপুরে যে ভয়ঙ্কর পরিবেশ তৈরি করেছে তা পত্রপত্রিকায় দেখা গেছে।
মণিপুরে কুকিদের এই লড়াই থেকে বাংলাদেশে বসবাসকারী তাদের নিকট জাতগোষ্ঠী বম বা কুকি চিনারা সম্প্রতি বেশ উদ্দীপ্ত হয়েছে। কারণ মণিপুরে কুকিরা সংখ্যায় খুবই কম। বাংলাদেশেও সংখ্যায় কম হলেও তারা যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অনাগ্রহী তা কিন্তু নয়।আবার ১৯৭১ সালে কুকি তথা মিজোদের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অবস্থানের কথাটাও আমাদের জানতে হবে। যারা আজ মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীন দেশে স্বায়ত্বশাসন দাবি করছে।
মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষে চীনের একটি অঘোষিত ফ্রন্ট ছিল বাংলাদেশে। যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। তাদের নিয়োগ দিয়েছিল তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। এই ফ্রন্টের যোদ্ধা ছিল মিজোরা। তাদের ব্যাপারে ‘ফ্যান্টমস অব চিটাগাং: দ্য ফিফথ আর্মি ইন বাংলাদেশ’ গ্রন্থে মেজর জেনারেল (অবঃ) এস এস উবান লিখেছেন,“পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্ব সীমান্তের সংলগ্ন হচ্ছে ভারতের মিজোরাম রাজ্য। এ সীমান্তে ভারতের কিছু বর্ডার পোস্ট আছে। মিজো বিদ্রোহীরা এই সীমান্ত অতিক্রম করে আবার ফিরে যেত দুর্গম কিন্তু রসদে পরিপূর্ণ পার্বত্য চট্টগ্রামের ঘাঁটিগুলোতে। এ কাজে পাকিস্তানিদের নীরব সমর্থন থাকত। এই এলাকায় যে চাকমা উপজাতি বাস করে বাংলাদেশীদের স্বাধীনতার প্রতি তাদের কোনো সহানুভূতি ছিল না। মিজো এবং চাকমা উভয়ই আমাদের অপারেশনগুলোর সময় অত্যন্ত শত্রুতামূলক ভূমিকা পালন করেছিল।”
মিজোদের ব্যাপারে তিনি আরও তথ্য দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে রাঙামাটির কৌশলগত অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে। পুরো শহরটায় শক্ত-সমর্থ পাঠান এবং কৌশলী মিজোদের মোতায়েন রাখা হয়েছে। তাদের সমর্থন দিচ্ছে চাকমারা।
এই ঘটনার পূর্ব ইতিহাসও জানা প্রয়োজন। ১৯৬৫ সালের ৩০ অক্টোবর এমএনএফ প্রেসিডেন্ট লালডেঙ্গা লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর কাছে স্বাধীন মিজোরাম রাষ্ট্র গঠনের আবদার করেছিলেন। এজন্য লাল বাহাদুর শাস্ত্রী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার জন্য সময় চেয়েছিলেন। এই কথায় আশ্বস্ত না হয়ে তিনি পাকিস্তানের যোগসাজশে গেরিলা দল গঠন করেন। পাকিস্তানের পার্বত্য চট্টগ্রাম সীমান্তে মিজোদের ঘাঁটি গড়ে তোলেন। চীন তখন তাদের প্রশিক্ষণের জন্য ইনস্ট্রাক্টর নিয়োগ করেছিল। এগুলো বাংলাদেশের মাটিতেই ঘটেছিল।
এই কুকি চিনারা তখন মিজোরামে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশের সহায়তা পেয়েছিল আজ পাল্টা বাংলাদেশে মিজোদের স্বায়ত্বশাসনের জন্য তারা মিজোরামের সাহায্যও পাচ্ছে। গত বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি বিবিসির একটি খবর এরকম ছিল— ‘বান্দরবান থেকে প্রায় ৫০০ বাংলাদেশী পালিয়ে ভারতের আশ্রয়ে’। তারা মূলত ভয়ে পালিয়েছিল, কেএনএফের সশস্ত্র সংঘাতের মধ্যে সেনাবাহিনী যখন অপারেশন শুরু করে তখন। মিজোরাম সরকার এবং সেখানকার খ্রিস্টানদের শক্তিশালী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইয়াং মিজো অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া নারী-পুরুষদের বাসস্থান ও খাবারের ব্যবস্থা করেছে।
২০২২ সালের ২১ অগাস্ট বিবিসি বাংলা ‘মিয়ানমার অভ্যুত্থান: সেনা নির্যাতন থেকে পালাতে ভারতের মিজোরামে শরণার্থীর ঢল’ নামে একটি সংবাদ প্রচার করে। তখনও মিজোরাম কিন্তু এই হাজার হাজার বহিরাগতকে সাদরে অভ্যর্থনা জানিয়ে বলেছিল ‘এটা আমাদের ফ্যামিলি ম্যাটার’। যে কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছে, খাবারের ব্যবস্থা করেছে। “এদের সঙ্গে আমাদের রক্তের সম্পর্ক, এটা আপনাকে বুঝতে হবে” আইজলে বিবিসির সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা। তিনি আরও বলেন, “ঐতিহাসিক কারণে আমাদের মধ্যে হয়তো সীমান্তর বিভেদ তৈরি হয়েছে, কিন্তু মিজো আর চিন-রা আসলে একই জাতিগোষ্ঠীর”।
শ্রী জ্যোতির্ময় রায় নামে একজন লেখক তার ‘মনিপুরের ইতিহাস’ গ্রন্থে বলেছেন, “কুকীদের আদি নিবাস কোথায় বলা কঠিন। তবে দক্ষিণ মালয় থেকে আরম্ভ করিয়া কাছাড় ও মনিপুর পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে তাদের দেখা যায়। তারা বিভিন্ন গোষ্ঠীতে বিভক্ত।” এই বইটিতে ১৮৪৫ সালেও তাদের বিদ্রোহের কথা লেখা হয়েছে। বলা হয়েছে এরা দক্ষিণ হতে প্রবলতর মানবগোষ্ঠী দ্বারা বিতাড়িত হয়ে মণিপুরে প্রবেশ করেছে। ইতিহাসে যারা চীন দেশের যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়নরত জনগোষ্ঠী হিসাবে চিহ্নিত।
ব্রিটিশ আমলে মিজোদের রাজনৈতিক ইতিহাসে আরও বহু ঘটনা যুক্ত হয়েছে। লুসাই পাহাড় অঞ্চলের এই জাতিগোষ্ঠী আসাম, বাংলা ও বার্মার ব্রিটিশ প্রশাসনের গভর্নরদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ১৮৯২ সালে তাদের একটি প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা হয়। সেটা সম্ভব হয়নি। এরপর ১৯৩৫ সালের প্রায় ১৬ হাজার বর্গমাইলের মিজো এলাকা গভর্নর জেনারেল ইন কাউন্সিলের অধীনে নিয়ে আসা হয়। তখন নিষিদ্ধ করা হয় তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। কিন্তু খ্রিস্টান মিশনারিরা ছিল সক্রিয়। যার ফলে তারা খ্রিস্টধর্মের দীক্ষা পায়। যাকে বলা হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী ব্রিটিশ পলিসির অংশ। ভারত ও বার্মার মধ্যবর্তী এবং আজকের বাংলাদেশে তাদের অবস্থান বজায় রাখার চেষ্টা। এরপর ১৯৪৬ সালে ব্রিটিশরা রাজনৈতিক দল গঠনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। তখন গঠিত হয় মিজো ইউনিয়ন পার্টি ও ইউনাইটেড মিজো ফ্রিডম অর্গানাইজেশন। প্রথম সংগঠনের সাপ্রংগা সংসদ সদস্য হলেন। অপর পার্টির লালমাভিয়াকে বার্মায় পাঠানো হলো মিজো রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে কথা বলার জন্য। কিন্তু বার্মা সরকার রাজি হয়নি। এরপর মিজো ইউনিয়ন কাউন্সিল নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠন গঠিত হয়, যারা ভারতের সঙ্গে থাকতে চেয়েছিল। এসময় ব্রিটিশ পলিটিকাল অফিসার ম্যাকডোনাল্ড মিজোদের জাতীয়তাবাদী পরামর্শ দিতে লাগলেন। এজন্য তিনি গির্জার নেতাদের ব্যবহার করলেন। কংগ্রেসের রাজনীতি থেকে দূরে রাখার সকল ব্যবস্থা করলেন। তিনি স্বাধীন মিজোরাম গঠনের খসড়া শাসনতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে দিলেন। কিন্তু লন্ডনের রাজকীয় সরকার এই এই প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। অন্যদিকে মিজোরাও এর বিপক্ষে ছিল। কারণ অভিজাত মিজোদের সর্দারি প্রথা সাধারণ মিজোরা বিলোপ চাইলেও তার প্রতিশ্রুতি তারা পায়নি।
এরপর লুসাই হিলসের ব্রিটিশ তত্ত্বাবধায়ক এল এল পিটার্স আরেকটা নয়া পলিসি করলেন। সিদ্ধান্ত হলো, মিজোরা যে যার অবস্থানে থেকে যাবে। পরবর্তীতে মিজো ইউনিয়ন পার্টির জয় হয়। তারা কংগ্রেসের সঙ্গে থাকে। এর মধ্যে ১৯৪৭ সাল এসে গেল। কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই মিজোরা যে যার অবস্থানে থেকে গেল। পরবর্তীতে ভারতবিরোধী কর্মকাণ্ডের পরও মিজোদের নেতা লালডেঙ্গার সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী মিজোরাম স্বায়ত্বশাসন পায়।
কথা হলো ভারতের মিজোরা মিজোরাম পেল। মিয়ানমারের কুকি-চিনারা চিন রাজ্য পেল। কিন্তু বাংলাদেশের মিজো বা কুকি চিনরা কী পেল? এজন্য বাংলাদেশের কুকিরা সহায়তা পাচ্ছে মিজো, চিনা কুকি, লুসাই, বমসহ তাদের সকল জাতগোষ্ঠীর কাছ থেকে। চিন রাজ্যে তাদের এমন গোষ্ঠী-উপগোষ্ঠী ৫০টির কম নয়। আর মিয়ানমারের চিন রাজ্যে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে কুকি-চিনাদের লড়াইও অনুপ্রেরণা যোগাতে পারে বান্দরবানের কুকি-চিনাদের মধ্যে। চিন রাজ্যে অন্তত দুটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী— চিন ডিফেন্স ফোর্স ও চিন ন্যাশনাল আর্মি কুকি চিনাদের শক্তিশালী সশস্ত্র সংগঠন। এসব জায়গা থেকে আশ্রয়, প্রশ্রয়, অস্ত্রশস্ত্র ও যুদ্ধকৌশল সহায়তাও বান্দরবানে তাদের জুটতে পারে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে মানসিক শক্তি অর্জনের অনেকগুলো উৎস তাদের বর্তমানে রয়েছে।
সুতরাং সব হিসেব মিলিয়ে বান্দরবানের বম বা কুকি চিনরা একা নয়। তাদের সহায়ক শক্তি আছে। ইতিহাস-ঐতিহ্যও তাদের সহায়ক শক্তি যোগাচ্ছে। এই জনগোষ্ঠীর স্বভাব-চরিত্রের অন্য দিকটিও আমাদের দেখতে হবে। মেজর জেনারেল শরণ সিং উবান তার মিজোগণ অধ্যায়ে মিজোদের নেতিবাচক বিষয়গুলো তুলে ধরলেও এও বলেছেন— মোটের উপর এই সরল উপজাতিগুলো কেবল শান্তিতে জীবিকা অর্জন করতে চায়। তাছাড়া আর কিছু নয়।
এক্ষেত্রে, বান্দরবানে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সঙ্গে তাদের যে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছিল সেখানে সরকারের দেওয়া সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করা হয়নি বলে ফেইসবুক পেইজে দাবি করেছে কুকি চিনারা। আলোচনা ব্যর্থ হবার ১২টি কারণও উল্লেখ করেছে তারা। এরমধ্যে প্রথম সশরীর বৈঠকে উভয়পক্ষের স্বাক্ষরিত শর্ত মোতাবেক কোনো রকমের কাজ সম্পাদন না করার অভিযোগ করেছে। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে তাদের বন্দিদের মুক্তি না দেওয়া, গরিবদের কাজের পর যথাযথ পারিশ্রমিক না দেওয়া, তাদের জনগণকে হয়রানি, তাদের ৬ দফা দাবির ব্যাপারে কোনো আগ্রহ না দেখানো, বমদের গ্রামগুলোতে অন্য জনগোষ্ঠীর বসতি তৈরি ও বেদখলের চেষ্টা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে শুধু প্রহসন ও কালক্ষেপণ করে কেএনএফ-কে দুর্বল করার কৌশল অবলম্বন।
পাশাপাশি কেএনএফের দাবির প্রসঙ্গে সরকারের প্রতিনিধির কাছে উত্থাপিত প্রশ্নের কোনো সদুত্তর না পাওয়া, কেএনএফের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী ও গোয়েন্দা লেলিয়ে দেওয়া, বমদের প্রতি মানবিক সাহায্য ও ত্রাণ সহায়তা না করে বান্দরবান জেলা পরিষদে ৫৭ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য গুদামজাত করে রাখার অভিযোগও করা হয়। অভিযোগে কুকি চিন জনগোষ্ঠীর প্রতি মিথ্যা আশ্বাস ও সরকারপক্ষের আন্তরিকতার ঘাটতির কথা বলা হয়েছে। আরও কিছু বিষয় যা বাস্তবায়নের কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করার কথাও তারা বলেছে। তাদের অভিযোগ, বিগত এক বছরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাদের কম্বিং অপারেশনকালীন সময়ে একজন বম নাবালিকাসহ ষাটোর্ধ নিরীহ জনগণকে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে বন্দি করে রেখেছে। যাদের কেউই কেএনএফের সশস্ত্র সদস্য নয় বলে তাদের দাবি। আলোচনায় যাবার সময় গ্রেফতার হওয়া দুজন কেএনএফ নিরস্ত্র সদস্য এখনও ক্যান্টনমেন্টে বন্দি বলে জানায় তারা। তারা এটাও বলেছে, কেএনএফ কাউকে কিডন্যাপ করলেও তাদেরকে পরে ছেড়ে দিয়েছে। তাদের বেলাতেই উল্টো আচরণ করা হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে আমরা বুঝতে পারছি তাদের দাবি-দাওয়াগুলো তেমন বড় কোনো বিষয় নয়। দেশের নাগরিক ব্যক্তি বা জনগোষ্ঠীর মৌলিক ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে এসব দাবিপূরণ করতে কোনো বেগ পাবার কথা নয় রাষ্ট্রের। এজন্য নাগরিক মর্যাদা মূল্যায়ন করার আন্তরিকতাই যথেষ্ট। বিডিনিউজ
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com