ডেস্ক রির্পোট"- বাবা- মায়ের বিচ্ছেদ হয়েছে অনেক আগেই। বিচ্ছেদের পর অন্যত্র বিয়ে করেছেন তারা। কিন্তু মেয়ের (২৩) কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। কিছুদিন আশ্রয় নেন বড় বোনের বাসায়। সেখান থেকে তার ভগ্নিপতির মাধ্যমে পরিচয় হয় মাসুদ নামের এক ব্যারিস্টারের সঙ্গে। মনের মিল হওয়ায় ব্যারিস্টার মাসুদের সঙ্গে একই বাসায় থাকতে শুরু করেন। বিয়ে না করলেও স্বামী-স্ত্রীর মতোই সংসার পেতেছিলেন। যদিও মাসুদ বেশির ভাগ সময় থাকতেন বিদেশে। দেশে যখন আসতেন তখনই ওই তরুণীর সঙ্গে থাকতেন। মাসুদ বিদেশে থাকায় সালমা ওরফে ঝুমুর (২৭) নামে এক প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে ওই তরুণীর পরিচয় করিয়ে দেয়।
পরে সালমার সঙ্গে মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিংয়ের একটি বাসায় ফ্ল্যাট ভাড়া নেয় ওই তরুণী। তাদের দুজনেরই খরচ বহন করতো ব্যারিস্টার মাসুদ। একই সঙ্গে থাকায় প্রায়ই রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যেতেন তারা। এমনই একদিন সালমা ওই তরুণীকে নিয়ে মোহাম্মদপুর গ্রিন সিটি এলাকায় ঘুরতে যায়। সেখানে গিয়ে সালমা (২৭) তার পূর্ব পরিচিত হিমেল (২৭) ও সানের (২৬) সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় ওই তরুণীকে। পরিচয় হওয়ার পর সালমার মতোই হিমেল ও সানের সঙ্গে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় আড্ডা দিতে যেতেন তিনি। একপর্যায়ে সানের সঙ্গে ওই তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রেমের সুবাদে হিমেল ও সান প্রায়ই তাদের বাসায় যাওয়া-আসা করতো। তবে এসবের কিছুই জানতো না বিদেশে অবস্থানরত ব্যারিস্টার মাসুদ। একদিন ওই তরুণীর সঙ্গে সানের সম্পর্কের কথা ব্যারিস্টার মাসুদকে জানিয়ে দেয় সালমা। এরপরই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে মাসুদ। তরুণীকে শিক্ষা দিতে সালমার সঙ্গে পরিকল্পনা করে সে।
সালমাকে মাসুদ বলে, যত টাকাই খরচ হোক ওই তরুণীকে আটক করে তার পর্নো ভিডিও ধারণ করতে হবে। মাসুদের পরিকল্পনা ও নির্দেশনা অনুযায়ী সালমা ভুক্তভোগী তরুণীকে আটক এবং পর্নো ভিডিও ধারণ করার বিষয়টি হিমেল, সান ও রকির সঙ্গে শেয়ার করে। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি ওই তরুণীর বাসায় গিয়ে সান বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তরুণীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। আর ওই ধর্ষণের পুরো ঘটনাটি সালমা গোপনে ক্যামেরাবন্দি করে। শুধু সেদিনই নয় এরপরও সান একাধিকবার ওই তরুণীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। যার প্রতিটি ভিডিও ধারণ করেছে সালমা। আর সেগুলো পাঠিয়ে দেয় ব্যারিস্টার মাসুদের কাছে।
এরপর গত ৫ই মার্চ হিমেল, সান ও রকি ওই তরুণীর বাসায় গিয়ে তাকে সারপ্রাইজ দেবে জানিয়ে চোখ বন্ধ করতে বলে। চোখ বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে তার হাত-পা বেঁধে ফেলে এবং মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেয় সান ও হিমেল। এরপর হিমেল ওই নারীকে একটি রুমে আটকে রেখে পাহারা দেয়। কিছুক্ষণ পর হিমেল ওই নারীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। তখন সালমা বাইরে গিয়ে শেকল ও তালা কিনে নিয়ে আসে। ওইদিন বিকালে তারা চার জনে ভুক্তভোগী তরুণীর হাত ও পা শেকল দিয়ে বেঁধে রুমের দরজা ও বাথরুমের দরজার সঙ্গে আটকে রাখে। শুধু খাওয়ার সময় তরুণীর হাতের শেকল খুলে দিতো তারা। এরপর গত ৭ই মার্চ রাতে আসামি রকি ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে। ৮ই মার্চ তারা ভুক্তভোগী তরুণীকে পর্নো ভিডিও দেখায়। তাকে ভিডিওর মতো একই কাজ করতে বাধ্য করে। ব্যারিস্টার মাসুদের নির্দেশনা অনুযায়ী সান, হিমেল, রকি ও সালমা এভাবেই বিভিন্ন সময়ে ভুক্তভোগী নারীকে নির্যাতন করে তাদের দেখানো পর্নো ভিডিওর মতো করে আলাদা আলাদা ভিডিও ধারণ করতো। আর তাদের প্রতিদিনের পৈশাচিক নির্যাতন ও অমানুষিক আচরণ ধারণ করা ভিডিও সালমা ব্যারিস্টার মাসুদের কাছে পাঠাতো। গত ২৯শে মার্চও নির্যাতনের পর সন্ধ্যায় সালমা ভুক্তভোগী তরুণীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বাইরে যায়। রাত আনুমানিক ১১টার দিকে তার ঘুম ভেঙে গেলে বাসায় কেউ নেই বুঝতে পেরে সে জানালা দিয়ে চিৎকার দেয়। এসময় তার চিৎকার শুনে এক পথচারী জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এ কল দিয়ে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশকে জানায়। পরে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ শিকল বাঁধা অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে।
গতকাল রাজধানীর শ্যামলীতে নিজ কার্যালয়ে ডিএমপি’র তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক এক সংবাদ সম্মেলনে এভাবেই এই লোমর্ষক ঘটনার বর্ণনা দেন। তিনি জানান, ওই তরুণী উদ্ধারের পর থেকেই অভিযানে নামে পুলিশ। রোববার রাতভর অভিযান চালিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ভুক্তভোগী তরুণীর কথিত প্রেমিক সান ও তার দুই বন্ধু হিমেল, রকি এবং সালমা ওরফে ঝুমুরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজিমুল হক বলেন, ভুক্তভোগী তরুণীকে নির্যাতনের বেশির ভাগ ভিডিও ও ছবি সালমার মোবাইলে। কিন্তু সে মোবাইলটি লুকিয়ে ফেলেছে। সেটি পেলে পৈশাচিক নির্যাতনের আসল তথ্য ও ভিডিওর গন্তব্য সম্পর্কে জানা যাবে। এ ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারেও অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, বর্তমানে ওই তরুণী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় ওই তরুণী গত ৩১শে মার্চ রাতে তাকে আটকে রেখে ধর্ষণ ও ধর্ষণের ভিডিও ধারণের অভিযোগে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেছেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে চার আসামিকে আদালতে চালান করা হয়েছে। এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মৃত্যুঞ্জয় দে সজল, সহকারী পুলিশ কমিশনার আজিমুল হক, মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো মাহফুজুল হক ভূঁইয়া, পরিদর্শক (তদন্ত) তোফাজ্জল হোসেন ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মো. ফারুকুল।
এদিকে শেকলে বেঁধে ওই তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় প্রেমিক সান, হিমেল, রকি ও সালমা ওরফে ঝুমুরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক ফারুকুল ইসলাম আসামিদের সোমবার আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিমের আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এসময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে বিচারক বলেন যত বড় ব্যক্তি হোক না কেন, জড়িতদের নামগুলো যেন অভিযোগপত্রে আসে।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com