ডেস্ক রির্পোট:- আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপণ্যের দাম যে হারে কমেছে, সে হারে বাংলাদেশের বাজারে প্রভাব পড়েনি। এর প্রধান কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়নকে। ডলারের দাম বৃদ্ধিতে আমদানি খরচ বেড়েছে। ফলে বেড়েছে পণ্যের দামও।
আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম যেটুকু কমেছে, তার একটি অংশ টাকার মান কমার সঙ্গে সমন্বয় হয়েছে। এছাড়া রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পণ্যের সরবরাহে বাধাগ্রস্ত হওয়া, দেশের বাজারে জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে পণ্যের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি বাজার ব্যবস্থার দুর্বলতাও পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রতিবেদনে দেখা যায়, পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে মানুষের খাদ্যসহ নিত্যপণ্য ও সেবা কেনার খরচ বেড়েছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। গত ফেব্রুয়ারিতে হয়েছে ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরের ফেব্রুয়ারির তুলনায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এ হার বেড়েছে। যদিও গত ডিসেম্বরের তুলনায় বেড়েছে, গত জানুয়ারির তুলনায় সামান্য কমেছে। এদিকে বারো মাসের হিসাবে গড় মূল্যস্ফীতির হার বাড়ছে। গত ফেব্রুয়ারিতে এ হার ছিল ৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ। গত বছরের চড়া মূল্যস্ফীতির সঙ্গে এবারের সমন্বয় হওয়ার কারণে গড় মূল্যস্ফীতির হার বাড়ছে।
সূত্র জানায়, ২০২২ সালের এপ্রিলে ডলারের দাম ছিল ৮৫ টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে এখন তা বেড়ে ১১০ টাকা দাঁড়িয়েছে। কিন্তু বাজারে আমদানিতে প্রতি ডলারের দাম গড়ে ১২২ থেকে ১২৪ টাকা। এক মাস আগে ১২৭ টাকায় উঠেছিল। এ হিসাবে টাকার মান কমেছে ৩০ শতাংশ থেকে ৪৮ শতাংশ। একই সঙ্গে ডলার সংকটের কারণে বেশির ভাগ পণ্য আমদানি হচ্ছে ঋণের মাধ্যমে। দুইভাবে ঋণ নেওয়া হচ্ছে। দেশের ব্যাংক থেকে টাকায় ঋণ নেওয়া হচ্ছে। বিদেশ থেকে ডলার ঋণ করে পণ্য আনা হচ্ছে। দুই বাজারেই সুদ হার বেড়েছে। আমদানি ঋণের বিপরীতে এখন ১৩ শতাংশের বেশি সুদ দিতে হচ্ছে। আগে ছিল ৯ শতাংশ। বিদেশি ঋণের সুদ আগে ছিল ৪ থেকে ৫ শতাংশ। এখন তা বেড়ে ৮ থেকে ৯ শতাংশ হয়েছে। একদিকে বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে। অন্যদিকে দেশি ঋণের সুদ দিতে হচ্ছে আগের চেয়ে ৪ শতাংশ বেশি। বিদেশি ঋণের সুদ দিতে হচ্ছে আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। এতে পণ্যের আমদানি খরচ বেড়ে যাচ্ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পণ্যের দামে।
বাজারে ডলারের সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানি করা যাচ্ছে না। ফলে একদিকে সরবরাহ সংকট দেখা দিচ্ছে, অন্যদিকে কমছে মজুত। এটিও পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। তবে পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে ডলারের দাম ও ঋণের সুদের হার বড় ভূমিকা রাখছে। এসব কারণে আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে অন্যান্য দেশীয় শিল্প পণ্যেও। এছাড়া দেশের বাজারে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে সব ধরনের পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়েছে।
ডলারের দাম, ঋণের সুদ, গ্যাস, জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ার কারণে পণ্যেও দাম যেটুকু বাড়ার কথা তার চেয়ে বেশি বেড়েছে। রোজা উপলক্ষ্যে চারটি পণ্যের কর কমানো হলেও এসব পণ্যের দাম খুব একটা কমেনি।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপণ্যসহ প্রায় সব পণ্যের দাম কমেছে। এর মধ্যে সয়াবিন তেলের দাম কমেছে ৫২ শতাংশ, গমের দাম ৩৬ শতাংশ, চিনির দাম গত অক্টোবর পর্যন্ত ১৮ শতাংশ বেড়ে এখন ৯ শতাংশ কমেছে। পামওয়েলের দাম কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। কিন্তু দেশের বাজারে এর দাম আরও বেড়েছে। আগে প্রতি লিটার বোতলজাত পামওয়েল ছিল ১৪৫ টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫৮ টাকা। অথচ ওই সময়ে পামওয়েলের কর কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ৩৬ শতাংশ কমে এখন আবার ৯ শতাংশ বেড়েছে। কমার হার বেশি হওয়ায় জাহাজ ভাড়া কমেছে। এতে পণ্যের দাম আরও বেশি হ্রাস পাওয়ার কথা। কিন্তু সেটি হয়নি।
আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে দেশের বাজারে পণ্যের দাম না কমার পেছনে তারা আরও একটি কারণকে চিহ্নিত করেছে। সেটি হচ্ছে বাজার ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা। কোন পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমা বা বাড়ার কারণে দেশের বাজারে এর কি প্রভাব পড়বে তার কোনো কাঠামো তৈরি করা নেই। যে কারণে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দেশের বাজারে পণ্যের দামে সমন্বয় সঠিকভাবে হচ্ছে না।
সূত্র জানায়, একদিকে দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে মজুত পণ্যের দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। কিন্তু মজুত নেই দেখিয়ে সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে দাম বাড়ানো হচ্ছে। সেটি বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু কমলেও এক মাসের ব্যবধানেও কমে না।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com