রাঙ্গামাটি:- রাঙ্গামাটির সদর উপজেলার সঙ্গে ৬ উপজেলার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌপথ। মূলত কাপ্তাই হ্রদে লঞ্চ চলাচলের মাধ্যমে এমন যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেছে। কিন্তু হ্রদটিতে সম্প্রতি পানি কমে গেছে। এতে শুধু যোগাযোগব্যবস্থাই নয়, বিদ্যুৎ উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জেলাজুড়ে মানুষের ভোগান্তি এখন চরমে। উপজেলাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামও বেড়ে গেছে।
রাঙ্গামাটি লঞ্চ মালিক সমিতি জানিয়েছে, সদর উপজেলার সঙ্গে বর্তমানে বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি ও বরকল উপজেলার লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে লংগদু উপজেলা পর্যন্ত লঞ্চ চললেও খুব কষ্ট করে সেবা দিতে হচ্ছে।
জুরাছড়ির প্রবীণা চাকমা বলেন, ‘লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় এখন রাঙ্গামাটি শহরে যেতে এক হাজারের বেশি টাকা খরচ করতে হয়। আগে তা ৩০০ টাকায় হয়ে যেত। শুধু তা-ই নয়, হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় মালামাল আনতে কষ্ট হচ্ছে দোকানিদের। তাই জিনিসপত্রের দাম একটু বেড়েছে।’
সূত্র জানিয়েছে, লঞ্চ চলাচল বন্ধ হওয়ায় জনসাধারণের ভোগান্তিই শুধু নয়, এসব লঞ্চে কাজ করা শ্রমিকরাও এখন বেকার হয়ে গেছেন। এ অবস্থায় ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত কিছু নৌকা চললেও এগুলো প্রায় সময়ই ডুবোচরে আটকে যাচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না।
অন্যদিকে ২৩০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বরাতে জানা গেছে, পানির অভাবে এই কেন্দ্রটি এখন বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে চালু থাকা ২টি ইউনিটে মাত্র ৫৮ থেকে ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে।
গতকাল কাপ্তাই হ্রদে পানির উচ্চতা ছিল ৭৭ দশমিক ০৪ এমএসএল (মেইন সি লেভেল)। কিন্তু এই মৌসুমে হ্রদে পানির উচ্চতা থাকার কথা ছিল ৮৩ দশমিক ২০ এমএসএল। অর্থাৎ হ্রদের পানির স্তর বর্তমানে অন্তত ৬ ফুট কম রয়েছে। হ্রদটিতে পানির উচ্চতা ৬৬ এমএসএলের নিচে নেমে গেলে বিপৎসীমা হিসেবে ধরা হয়।
লংগদু থেকে নিরুপা চাকমা বলেন, ‘হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় অনেক কষ্ট করে বাড়িতে যেতে হয়। এর আগে তিন ঘণ্টায় লংগদু পৌঁছাতে পারতাম। এখন সময় লাগছে ৫ ঘণ্টা।’
কাপ্তাই হ্রদে পানি কমে ‘অচল’ রাঙ্গামাটি
রাঙ্গামাটি লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে যাওয়া নতুন কিছু নয়। প্রতি বছরই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ সময় লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকে।’
মালিক সমিতির অভিযোগ, প্রতি বছর এই মৌসুমে হ্রদের পানি শুকিয়ে জনগণ দুর্ভোগে পড়লেও সরকারের পক্ষ থেকে এটির নাব্যতা রক্ষায় কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।
কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ব্যবস্থাপক বলেন, ‘আগামী কয়েক দিনে ভারি বৃষ্টিপাত না হলে পানির স্তর ৭০ দশমিক ০০ এমএসএলের নিচে নেমে যাবে। এমন হলে চালু থাকা দুটি ইউনিটও বন্ধ হয়ে যাবে।’
উল্লেখ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় কৃত্রিম জলাধার রাঙ্গামাটি কাপ্তাই হ্রদ। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী নদীর ওপর বাঁধ দিয়ে ২৫৬ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিশাল এই হ্রদ সৃষ্টি করা হয়। যদিও এতে রাঙ্গামাটি জেলায় ৫৪ হাজার বিঘা কৃষিজমি পানিতে ডুবে যায়। যা পার্বত্য চট্টগ্রামের চাষযোগ্য জমির প্রায় ৪০ ভাগ। এ ছাড়া ওই বাঁধের কারণে সম্পত্তি ও ঘরবাড়ির ক্ষতি ছাড়াও লক্ষাধিক মানুষ উদ্বাস্তু হয়।
১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধ হওয়ার ৬১ বছর পরও হ্রদটির নাব্যতা রক্ষায় কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। কালক্রমে মাটি ভরাট হয়ে হ্রদের গভীরতা কমে ব্যাহত হচ্ছে নৌ চলাচল, বিদ্যুৎ উৎপাদন।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com