ডেস্ক রির্পোট:- শেয়ারবাজারে দুর্যোগ চলছে। একেবারে তলানিতে নেমে এসেছে বাজার। সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছেন লাখো বিনিয়োগকারী। গত ৭ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক ৩০০ পয়েন্ট এবং বাজার মূলধন কমেছে ৬১ হাজার কোটি টাকা। আর মঙ্গলবার একদিনেই সূচক কমেছে ৮৪ পয়েন্ট। সূচকের বর্তমান অবস্থা ৩ বছরের সর্বনিম্ন। তবে আলোচ্য সময়ে বাজারে নতুন কিছু কোম্পানি যোগ হয়েছে। এগুলো বাদ দিলে সূচকের অবস্থা আরও ভয়াবহ। ফলে পুরো বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রতিষ্ঠানগুলো ফোসর্ড সেল (বাধ্যতামূলক শেয়ার বিক্রি) করছে। এতে শেয়ার বিক্রির চাপ আরও বাড়ছে। পরিস্থিতি উন্নয়নের কোনো লক্ষণ নেই। তবে মন্দার মধ্যেও দুর্বল কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংক খাতের আমানতের সুদের হার বাড়ানো, বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজের ফোর্সড সেল এবং লভ্যাংশ বিতরণের পর বড় কোম্পানিগুলোর দাম সমন্বয়ের কারণে বাজারে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ব্যাংক খাতে সুদের হার বেড়েছে। বর্তমানে আমানতের সুদের হার সাড়ে ১১ শতাংশ। এটা আবার ঝুঁকিমুক্ত। এ কারণে শেয়ারবাজার থেকে টাকা ব্যাংকে যাচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ফোর্সড সেল করছে। অন্যদিকে বাজারে বড় অংশীজন সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবি। তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা এনে আগে বিনিয়োগ করেছিল। বর্তমানে এসব টাকা ফেরত দিতে হচ্ছে। ফলে তারা শেয়ার বিক্রি করে টাকা ফেরত দিচ্ছে। এসব কিছুর চাপ পড়েছে বাজারে। এতে বাজারের সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
গত ৭ কার্যদিবসে ডিএসইর মূল্যসূচক ৩০০ পয়েন্ট কমেছে। এ সময়ে বাজার মূলধন হারিয়েছে ৬১ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে গত দুদিনে সূচক কমেছে ১৫৩ পয়েন্ট এবং বাজার মূলধন কমেছে ১২ হাজার কোটি টাকা। ফলে বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। একক দিন হিসাবে ডিএসইতে মঙ্গলবার ৩৯৬টি কোম্পানির ১৬ কোটি ১৩ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার মোট মূল্য ৪৬৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এরমধ্যে দাম বেড়েছে ৪১টি কোম্পানির শেয়ারের, কমেছে ৩১৯টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৬টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। ডিএসইর ব্রড সূচক আগের দিনের চেয়ে ৮৪ কমে ৫ হাজার ৮১৪ পয়েন্টে নেমে এসেছে।
সূচকের এ অবস্থা ৩ বছরের সর্বনিম্ন। তবে এর মধ্যে নতুন কিছু কোম্পানি যোগ হয়েছে। সেগুলো বাদ দিলে সূচক ৫ বছরের সর্বনিম্নে চলে আসবে। এদিকে ডিএস-৩০ মূল্যসূচক মঙ্গলবার ২২ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ২০ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২৫৮ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএসইর বাজার মূলধন আগের দিনের চেয়ে কমে ৬ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, এ বাজারে বড় সমস্যা হলো দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কম। সবাই স্বল্প মেয়াদে লাভ করতে চান। এজন্য বাজার একটু বাড়লেই শেয়ার বিক্রি করে বের হয়ে যেতে চান। তিনি বলেন, বর্তমানে বাজারে সূচক যেভাবে কমছে, তা মোটামুটি প্রত্যাশা ছিল। সবারই ধারণা ছিল ফ্লোর প্রাইস (নিম্নসীমা) তুলে নিলে একটা ধাক্কা আসবে। তবে এটি তাৎক্ষণিকভাবে না এসে একটু পরে এসেছে। এছাড়া যেসব কোম্পানি সূচকে বড় ভূমিকা রাখে, লভ্যাংশ বিতরণের পর ওই কোম্পানির দাম সমন্বয় হচ্ছে। এতে বাজারে প্রভাব পড়ছে। আশা করছি, দু-একদিনের মধ্যে বাজার আপন গতিতে ঠিক হয়ে যাবে।
শীর্ষ দশ কোম্পানি : মঙ্গলবার ডিএসইতে যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেশি কমেছে সেগুলো হলো-এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, ফু-ওয়াং সিরামিক, গোল্ডেন সন, সেন্ট্রাল ফার্মা, রেনেটা, বেস্ট হোল্ডিংস, এসএস স্টিল, লাফার্জ হোলসিম, ব্রিটিশ-আমেরিকান ট্যোবাকো এবং তৌফিকা ফুড। এদিন যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেশি বেড়েছে সেগুলো হলো-সেন্ট্রাল ফার্মা, ড্যাফোডিল কম্পিউটার, মুন্নু ফেব্রিক্স, ফু-ওয়াং সিরামিক, আনলিমা ইয়ার্ন, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ড এবং সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স। অন্যদিকে যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেশি কমেছে সেগুলো হলো-পিপলস লিজিং, রবি আজিয়াটা, খুলনা প্রিন্টিং, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, তমিজুদ্দিন টেক্সটাইল, গোল্ডেন সন, উসমানিয়া গ্লাস, বিবিএস ক্যাবল, ওরিয়ন ইনফিউশন এবং গোল্ডেন হারভেস্ট।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com