ডেস্ক রির্পোট:- কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ময়মনসিংহগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের ৯টি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা পৌনে ২টায় কুমিল্লার হাসানপুর স্টেশন সংলগ্ন তেজের বাজার এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় ট্রেনের ৯টি বগি উল্টে ঢাকা–চট্টগ্রাম ডাবল রেললাইনের উভয় পাশে ছড়িয়ে পড়ে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। আহতদের মধ্যে ৫ জনের অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন নাঙ্গলকোট স্টেশন মাস্টার জামাল হোসেন। দুর্ঘটনার ফলে চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গতকাল গভীর রাত পর্যন্তও ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি। গতকাল রাত ১টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হাসানপুর স্টেশনের পার্শ্ববর্তী স্টেশনগুলোতে চট্টগ্রামগামী ৮টি ট্রেন আটকা ছিল। চট্টগ্রামের সাথে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম, ঢাকা ও ময়মনসিংহ রুটের ৭টি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। এতে প্রায় ৫ হাজার যাত্রী অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েন। গতকাল বিকাল ৩টায় চট্টগ্রাম স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, ট্রেনের জন্য শত শত যাত্রী অপেক্ষা করছেন। রাত পর্যন্ত যাত্রীরা ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করেছেন। অনেকে ট্রেনে, অনেকে প্ল্যাটফর্মে বসে ইফতার সেরেছেন।
দুর্ঘটনার পর চট্টগ্রাম ও আখাউড়া রেলওয়ে জংশন থেকে দুটি রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছে। দুর্ঘটনার প্রায় ৫ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৭টায় উদ্ধার কাজ শুরু করে। রাত সাড়ে ১২টায় মাত্র দুটি বগি উদ্ধার হয়। ঘটনাস্থলে উদ্ধার কাজে দায়িত্ব পালনরত রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম রাত সাড়ে ১২টায় আজাদীকে বলেন, এখন পর্যন্ত ২টি বগি উদ্ধার করেছি। আর ২টি বগি উদ্ধার হলে কোনোরকমে একটি লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল চালু করা যাবে। রাতের মধ্যে উদ্ধার কাজ শেষ করে ট্রেন চালু করতে হবে। আমরা সবাই কাজ করছি। তবে রেলের একটি সূত্র বলেছে, রাতের মধ্যে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে না।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত রেলওয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা গত রাত সাড় ১২টায় আজাদীকে বলেন, লাইনচ্যুত বগিগুলো উদ্ধার করতে দীর্ঘ সময় লাগবে। দুর্ঘটনাস্থলে বিপুল পরিমাণ আইনশৃক্সখলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন।
বিজয় এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা ৮টি ট্রেন কুমিল্লার কয়েকটি স্টেশনে আটকে পড়েছে। দুর্ঘটনার পর চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকা, সিলেট ও ময়মনসিংহের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
কুমিল্লার স্টেশন মাস্টার মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, কুমিল্লা স্টেশনে আটকে পড়েছে ঢাকা থেকে আসা চট্টলা এক্সপ্রেস, কুমিল্লা স্টেশন পার হয়ে সদরের রসুলপুর এলাকায় আছে ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস, লাকসামে আছে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সুবর্ণা ও সিলেট থেকে ছেড়ে আসা পাহাড়িকা এক্সপ্রেস। লালমাই এলাকায় আছে ঢাকা থেকে আসা কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, লাকসামে আছে চাঁদপুর থেকে আসা সাগরিকা এক্সপ্রেস। এছাড়া চট্টগ্রাম অভিমুখে যাওয়া আরও দুটি মালবাহী ট্রেন আটকে পড়েছে লাকসাম স্টেশনে।
রেলওয়ে কুমিল্লার ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) লিয়াকত আলী মজুমদার জানান, প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি অতিরিক্ত গরমের কারণে লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে। তবে তদন্তের পর এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।
নাঙ্গলকোট রেলস্টেশন মাস্টার জামাল হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে ট্রেনের ইঞ্জিনের সঙ্গে থাকা লক ভেঙে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানতে পেরেছি।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গতকাল কুমিল্লায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনটির মধ্যে মোট ১৮টি বগি ছিল। এর মধ্যে ৯টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় প্রায় আধা কিলোমিটার রেলপথ দুমড়ে–মুচড়ে গেছে। লাইনচ্যুত বগিগুলো পার্শ্ববর্তী মাঠে ও বাড়িতে গিয়ে পড়েছে।
ঘটনার সময় ট্রেনের ইঞ্জিনের হুক খুলে গেলে চালক এবং ইঞ্জিনটি রক্ষা পায়। পরে চালক ট্রেনের ইঞ্জিনটিকে হাসানপুর রেলস্টেশনে নিয়ে যান।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, কুমিল্লার হাসানপুর স্টেশন সংলগ্ন তেজের বাজার এলাকায় বিজয় এক্সপ্রেসের ৯টি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। আমরা দুর্ঘটনাস্থলে আছি। দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনটি উদ্ধারের চেষ্টা করছি।
চট্টগ্রামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রুটের ট্রেনগুলো বিভিন্ন স্টেশনে আটকা পড়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম স্টেশন ম্যানেজার। চট্টগ্রাম স্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. মনিরুজ্জামান রাত সাড়ে ৮টায় জানান, ট্রেন দুর্ঘটনার পর চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ঢাকাগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেস, সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ও মেঘনা এক্সপ্রেস ছেড়ে গেছে। ট্রেনগুলো বিভিন্ন স্টেশনে অপেক্ষা করছে। লাইন ঠিক হলে চলে যাবে।
চট্টগ্রাম স্টেশন মাস্টার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনার কারণে মহানগর গোধূলী ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। ট্রেনটি ৩টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস এখনো (রাত ১১টা পর্যন্ত) ছেড়ে যায়নি। এই ট্রেনটি বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর অপর পারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল।
তিনি জানান, তূর্ণা নিশীথা এবং ঢাকা মেইল রেডি আছে। এই দুটি ট্রেন যথাসময়ে চট্টগ্রাম ছেড়ে যাবে বলে আশা করছি। উদয়ন এক্সপ্রেস রাত ৯টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু যেতে পারেনি। তিনি বলেন, কুমিল্লায় ট্রেন দুর্ঘটনার কারণে দেশের অন্যান্য স্টেশনের সঙ্গে চট্টগ্রামের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
৭টি ট্রেনের যাত্রা বাতিল : দুর্ঘটনার পর ৭টি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। ৭টি ট্রেনে ৪ হাজার ৯শ আসন রয়েছে। ট্রেন চলাচল দীর্ঘক্ষণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা বিপাকে পড়েন। এতে অন্তত ৫ হাজার যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েছেন।
চট্টগ্রাম স্টেশন ম্যানেজার মো. শফিকুল ইসলাম জানান, যাত্রা বাতিল হওয়া ট্রেনগুলো হলো চট্টগ্রাম থেকে বিকাল ৩টায় ঢাকাগামী মহানগর গোধূলি এক্সপ্রেস (৭০৩), ঢাকা থেকে রাত ১১টা ১৫ মিনিটে চট্টগ্রাম অভিমুখী তূর্ণা এক্সপ্রেস (৭৪২), দুর্ঘটনায় পড়া চট্টগ্রাম থেকে ময়মনসিংহগামী সকাল সাড়ে ১১টার বিজয় এক্সপ্রেস (৭৮৫) ও ময়মনসিংহগামী থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখী রাত ৮টা ১০ মিনিটের বিজয় এক্সপ্রেস (৭৮৬), চট্টগ্রাম থেকে রাত সাড়ে ১১টার ঢাকাগামী তূর্ণা, ঢাকা মেইল ও সিলেটগামী উদয়ন।আজাদী
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com