ডেস্ক রির্পোট:- বাঙালিদের নিয়মিত নানাভাবে হয়রানি করছে উপজাতিদের একটি চক্র। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন দায়িত্বশীলরাও। চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার বাঙালি ব্যবসায়ীরা জিম্মি ‘উবাচ-পুচিমং’ বাহিনীর হাতে।
এই উপজেলায় তাদের হাতে জিম্মি অনেকেই। বাঙালি এক হিন্দু পরিবারের সদস্যকে কৌশলে ডেকে নিয়ে উপজাতি উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজাতি ইউপি চেয়ারম্যান এবং উপজাতি একজন হেডম্যান মিলে মারধর, কিল-ঘুষিসহ নানা নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় রাঙ্গামাটির সিএমএম আদালতে একটি মামলাও দায়ের করেছেন নির্যাতিত ব্যবসায়ী।
জানা গেছে, রাঙ্গামাটির রাজস্থলীতে বাঙালি সনাতনী সম্প্রদায়ের সংখ্যালঘু ব্যবসায়ী যীশু সাহাকে (৪২) গাছের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়েছেন রাজস্থলী উপজেলা চেয়ারম্যান উবাচ মারমা ও তার সহযোগীরা। একইভাবে ২০ লাখ টাকা না দিলে ওই ব্যবসায়ীতে গুম করে ব্যবসা-বাণিজ্য দখল করে নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাজস্থলী উপজেলা বাসভবনের গোল ঘরে ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাঙ্গামাটি জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রট (সিএমএম) আদালতে নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী যীশু সাহা বাদী হয়ে চারজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
মামলাটি আদালত রাজস্থলী থানাকে তদন্ত করে দ্রুত রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দেয়। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলা চেয়ারমম্যান উবাচ মারমা (৫২)। তিনি রাজস্থলীর ক্রজাইঞো মারমার ছেলে।
অপর আসামিরা হলেন, ২নং গাইন্দা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পুচিমং মারমা (৪৮), ৩২৮ নম্বর পৌয়াথু মৌজার হেডম্যান উথিন চিন মারমা (৬০) ও স্থানীয় দোকানদার সঞ্জয় বণিক (৪২)।
মামলার এজাহার সূত্রে আরও জানা গেছে, চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি একটি চিঠি ইস্যু করেন রাজস্থলী উপজেলা চেয়ারম্যান উবাচু মারমা। সেখানে বলা হয়, আমার (যীশু সাহা) বিরুদ্ধে সঞ্জয় বণিক ও সাজু বণিক নামে দুই ব্যক্তি একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেই অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য ৫ ফেব্রুয়ারি উপজেলা পরিষদে একটি জরুরি সভা ডাকা হয় কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যানের ব্যস্ততার কারণে সেই দিন বৈঠক হয়নি।
পরের দিন ৬ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনের বৈঠকখানায় মামলার বাদী (যীশু সাহা) উপস্থিত হওয়ার আগেই বিবাদীরা উপস্থিত হয়। এরপর যীশু সাহা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়া মাত্রই রাজস্থলী উপজেলা চেয়ারম্যান উবাচ মারমা দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলতে নির্দেশ দেন গাইন্দা ইউপি চেয়ারম্যান পুচিং মং মারমা এবং ৩২৮ নম্বর পৌয়াথু মৌজার হেডম্যান উথিন চিন মারমাকে। এ সময় তিনিসহ (উপজেলা চেয়ারম্যান) উপস্থিত কয়েকজন আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন।
একইভাবে সবাই মিলে আমাকে বৈঠকখানার পিলারের সঙ্গে বেঁধে কিল-ঘুষি, লাথিসহ বেদমপ্রহার করেন। পরে আমার কাছ থেকে জোর করে ১০০ টাকার তিনটা স্ট্যাম্প ও তিনটা চেকের কপিতে জোর করে স্বাক্ষর নেয়।
এ সময় চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ২০ লাখ টাকা না দিলে রাজস্থলীতে থাকা স্থায়ী সম্পত্তিগুলো নিয়ে নেওয়ার হুমকি দেয় তারা। একইভাবে টাকা না দিলে আমাকেও গুম করার হুমকির পাশাপাশি আমার ব্যবসা বাণিজ্যও দখল করা হবে বলে জানান তিনি।
ভুক্তভোগী ও নির্যাতনের শিকার যীশু সাহা বলেন, আমাকে বেঁধে এমনভাবে মারধর করেছে, আমি অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। মনে হয়েছিল, বাঙালিদেরকে ধরে এনে এভাবেই মারধর শুরু করে। আমরা বাঙালি সংখ্যালঘু বলেই উপজাতিরা এভাবে মারধর করবে? এই মারধরের ঘটনার পর আমি কৌশলে বের হয়ে দ্রুত আইনের আশ্রয় নিয়ে মামলা করেছি। আমার কাছে ঘটনার বিস্তারিত ভিডিও ফুটেজও রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমার ভাইকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যও করতে দেবে না বলছেন উপজেলা চেয়ারম্যানসহ তার লোকজন। আমরা পরিবারের সদস্যরা এখন রীতিমতো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। মামলা নামাতেও চাপ দিচ্ছেন। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই। তাছাড়া পাহাড়ি এলাকায় বাঙালি সম্প্রদায়ের মানুষ কম থাকায় উপজাতিরা বাঙালিদের হুমকি দিয়ে নানা সুবিধা নিয়ে আসছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই প্রিয় লাল ঘোষ বলেন, এক সপ্তাহ আগে রাঙ্গামাটি জেলার সিএমএম আদালত থেকে একটি মামলার তদনতের জন্য এসেছে। তদন্তের দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে। মামলার বাদীকে ফোন করেছি। আলোচনা করে ঘটনার বিস্তারিত জেনে এবং সঠিক তদন্ত করে দ্রুত রিপোর্ট দাখিল করা হবে আদালতে। তাছাড়া বিষয়টি বাদীর সঙ্গে দেখা না হওয়া পর্যন্ত বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না।
ব্যবসায়ী যীশু সাহাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে উপজেলা চেয়ারম্যানসহ সহযোগীরা পিটিয়ে মারধর, কিল-ঘুষির দৃশ্যটি মোবাইলে ধারণ করা হয়েছে। যার ডকুমেন্টস কালবেলার চট্টগ্রাম অফিসে সংরক্ষিত রয়েছে।কালবেলা
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com