ডেস্ক রির্পোট:- ভারত মহাসাগরে নৌদস্যুদের কাছে জিম্মী বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ সোমালিয়া উপকূলের পথে রয়েছে। স্বয়ংক্রীয় ভারি আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দস্যুদলের পাহারায় ও তাদের কড়া নির্দেশনায় জাহাজটি চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার নাগাদ এটি সোমালিয়া উপকূলে দস্যুদের নিরাপদ আস্তানায় পৌঁছাতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, সেটি উপকূলে পৌঁছার পর যোগাযোগ স্থাপন হবে এবং জাহাজে জিম্মী ২৩ নাবিকের সর্বশেষ অবস্থা জানা যাবে।
এরমধ্যে দস্যুরা মুক্তিপণ হিসাবে জাহাজ মালিকের কাছে ৫০ হাজার ডলার দাবি করেছে। জাহাজটির প্রধান কর্মকর্তা (চিফ অফিসার) মো. আতিক উল্লাহ খান এক অডিও বার্তায় জানিয়েছেন, টাকা দেওয়া না হলে তাদের একজন একজন করে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে দস্যুরা। এ অবস্থায় জিম্মী নাবিকদের সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনার আকুতি জানিয়েছেন তাদের পরিবারের সদস্য ও স্বজনেরা। গতকাল বুধবার সকাল থেকেই চট্টগ্রাম ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে জিম্মী নাবিকদের খরব নিতে নগরীর আগ্রাবাদ বারিক বিল্ডিং এলাকায় জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম গ্রুপের অফিসে ছুটে আসেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। এসময় তাদের কান্না ও আহাজারিতে সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। কর্মকর্তারা তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। জিম্মীদের নিরাপদে এবং সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দেওয়া হয়। জাহাজটি জিম্মি হওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে নাবিকদের স্বজনদের।
এর আগে জাহাজটি দখলে নিয়ে দস্যুরা জিম্মী করার পর নাবিকদের কয়েক জন তাদের সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরে জিম্মীদশা থেকে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনার আকুতি জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২৩ নাবিককে জিম্মি করে দস্যুরা। কবির গ্রুপের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন করে। আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে ৫৫ টন কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে সেটি দস্যুদের কবলে পড়ে। জাহাজটি জিম্মী করে নিজেদের আস্তানা সোমালিয়া উপকূলের দিকে নিয়ে যেতে বাধ্য করে জিম্মীকারীরা।
গতকাল বুধবার নাবিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন জানান, ভ্যাসেল ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট থেকে এমভি আবদুল্লাহর সর্বশেষ অবস্থান তারা জানতে পেরেছেন। উপকূলে পৌঁছাতে আরও দেড়দিনের মতো সময় লাগতে পারে। সে হিসাবে আজ এটি দস্যুদের আস্তানায় পৌঁছাতে পারে। বিএমএমওএ সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, আশা করছি, উপকূলে পৌঁছার পর নাবিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে। মূলত উপকূলে জাহাজ নেয়ার পরই এ পরিস্থিতির পরবর্তী তথ্য মিলবে।
এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ মেহেরুল করিম আগেই জানিয়েছেন আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব-আমিরাতের দুবাই যাওয়ার পথে জাহাজটি দস্যুদের কবলে পড়ে। জাহাজে থাকা নাবিকদের কাছ থেকে তারা দস্যু আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানতে পারেন।
কেএসআরএম গ্রুপের মুখপাত্র মিজানুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর নাবিকদের সঙ্গে সর্বশেষ যোগাযোগ হয়। তখন তারা সবাই সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছিলেন। এরপর দস্যুরা নাবিকদের মোবাইল কেড়ে নেয়ায় আর যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
জাহাজে থাকা নাবিকেরা হলেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চীফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চীফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো.আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুর উদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ। জানা গেছে, দস্যুদের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ৫০ হাজার ডলার মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু বলা হয়নি কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে। কেএসআরএম কর্মকর্তারা জানান, নাবিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা সুস্থ আছেন, নিরাপদ আছেন। জাহাজ এখন সোমালিয়া উপকূলের দিকে যাচ্ছে। পুরোপুরি দস্যুদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দস্যুরা নিজেদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নেওয়ার পর তাদের দাবি আমাদের কাছে জানাবে। এখন পর্যন্ত যোগাযোগ হয়নি। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। নাবিকদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাদেরকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছি। তাদের পাশে আছি। আগেও আমাদের একটি জাহাজ দস্যুদের আক্রমণের শিকার হয়েছে। ১০০ দিন পর অক্ষত অবস্থায় ফেরত আনতে সক্ষম হয়েছি। এটা নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। এর আগে, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরবসাগরে সোমালিয়ান দস্যুদের কবলে পড়েছিল একই প্রতিষ্ঠানের আরেকটি জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’। ওই জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি এক ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। সরকারি উদ্যোগসহ নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেয়া হয়। ১৫ মার্চ তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
ইরানি ট্রলার থেকে আক্রমণ : আগে ছিনতাই করা ইরানের একটি ট্রলার থেকে এসে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ জিম্মী করেছে দস্যুরা। জানা গেছে, মাসখানেক আগে ওই মাছ ধরা ট্রলার ছিনতাইয়ের পর ভারত মহাসাগরে নতুন জাহাজর খোঁজ করছিল সোমালি দস্যুরা। সেই দস্যুদেরই কবলে পড়েছে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। জাহাজটির চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান মালিকপক্ষের কাছে পাঠানো এক অডিও বার্তায় বলেছেন, এখন ওই ইরানি ফিশিং বোটকে ওরা রিলিজ করে দেবে। সেটির ফুয়েল শেষ হয়ে গেছে। আমাদের থেকে ওরা ডিজেল নিচ্ছে। এমভি আবদুল্লাহর এক ক্রু আরেক অডিও বার্তায় বলেছেন, ইরানি ওই ফিশিং বোট আমাদের জাহাজের সাথে বাঁধা আছে। ওই ফিশিং বোট থেকেই মূলত ওরা আমাদেরকে আক্রমণ করছে। জাহাজটি জিম্মী করার পর চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান জাহাজের মালিকপক্ষকে পাঠানো এক অডিও বার্তায় দস্যুদের আক্রমণের ঘটনার বর্ণনা দেন। অডিও বার্তায় আতিক বলেন, আমি চিফ অফিসার বলছি, আবদুল্লাহ জাহাজ থেকে। মঙ্গলবার জাহাজের সময় আনুমানিক সাড়ে ১০টা এবং জিএমটি (গ্রিনিচি মান সময়) সময় ৭টা ৩০ এর সময় একটা হাইস্পিড স্পিড বোট আমাদের দিকে আসছিল। আমরা সবাই ব্রিজে গেলাম। ওখান থেকে পরে সিটি টেলে গেলাম। ক্যাপ্টেন আর সেকেন্ডার অফিসার ব্রিজে ছিল। তখন ওই জিগজ্যাগ করলাম। এসওএস (বিপদে পড়লে জীবন রক্ষায় জরুরি বার্তা) করলাম। ইউকেএমটিওতে (যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনস) ট্রাই করছিলাম। কিন্তু ইউকেএমটিও তখন ফোন রিসিভ করেনি। ওরা চলে আসল, পাইরেটসগুলা। চলে আসার পরে ক্যাপ্টেন আর সেকেন্ড অফিসারকে জিম্মী করল।
ফাঁকা গুলি ছোড়ে দস্যুরা : এমভি আবদুল্লাহ দস্যু কবলে পড়ার যে ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে তাতে দেখা যায়, কাঁধে বন্দুক নিয়ে এক দস্যু জাহাজের রেলিং বেয়ে উঠছে। জাহাজে ওঠার পরই নাবিকদের সবাইকে জাহাজের ব্রিজে জড়ো করে সেখানে ফাঁকা গুলি করে দস্যুরা। আতিক উল্লাহ খান অডিও বার্তায় বলেন, আমাদেরকে ডাকল। আমরা সবাই আসলাম। ওরা কিছু কিছু গোলাগুলি করল। আমরা সবাই ভয় পেয়েছিলাম। সবাই ব্রিজে বসেছিল। এমনি কারো গায়ে হাত তোলেনি। সেকেন্ড অফিসারকে হালকা একটু ইয়ে করছে। তারপর আরেকটা স্পিডবোট করে আরো কয়েকজন চলে আসল। এভাবে প্রায় ১৫-২০জন চলে আসছে। কতক্ষণ পর একটা বড় ফিশিং ভেসেল (মাছ ধরার নৌযান) আসল। ওটা হচ্ছে একটা ইরানিয়ান ফিশিং বোট, যেটা নাকি ওরা এক মাস আগে জিম্মী করছিল এই সোমালি পাইরেটসগুলা। ইরানি ওই জাহাজ নিয়ে সাগরে ঘুরে ঘুরে দস্যুরা নতুন জাহাজ খুঁজছিল বলে জানান আতিক। ওরা ওইটাতে ছিল। ওইটাতে ঘুরে ওরা এক মাস ধরে সার্চিং করছিল। কোনো জাহাজ খুঁজছিল। তো আনফরচুনেটলি আমাদের জাহাজে ওরা আসল। এখন ওই ইরানিয়ান ফিশিং বোটকে ওরা রিলিজ করে দিবে। ওই ফিশিং বোটে ফুয়েল শেষ হয়ে গেছে। আমাদের থেকে ওরা ডিজেল নিচ্ছে। ওয়েলডেন পাম্প দিয়ে দিচ্ছি। কারণ ওদের কোনো সিস্টেম নেই নেওয়ার। দস্যুদের জাহাজ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরের পরিস্থিতি জানিয়ে তিনি বলেন, তো তারপর ওরা জাহাজ স্টপ করাল। সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার আর থার্ড ইঞ্জিনিয়ার ইঞ্জিন রুমে গেল। গিয়ে সিস্টেমেটিক্যালি স্টপ করছে। জাহাজের কোনো ক্ষয়ক্ষতি এখনো আল্লাহর রহমতে হয়নি। আমাদেরও তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বাট ভয়ে আছে আরকি সবাই একটু ভয় পাচ্ছে। ভয় দেখাচ্ছে।
এমভি আব্দুল্লাহয় থাকা একজন ক্রু বিদেশি জাহাজে কর্মরত আরেক বাংলাদেশি নাবিককে কয়েকটি ছোট অডিও বার্তা পাঠিয়েছেন। এমভি আবদুল্লাহর ওই ক্রু আসলে কে, সেটি জানা যায়নি। অডিওতে তিনি বলেন, দস্যুরা যে ইরানি ফিশিং বোটে করে এসেছে, সেটি জাহাজের সঙ্গে বাঁধা আছে। ওই ইরানি ফিশিং বোটটাকে এখন ওরা ছেড়ে দেবে। এটারে ওরা দুই মাস ধরে আটক করে রাখছিল। এটারে আমরা ডিজেল অয়েল দিলাম। ডিজেল দেওয়া শেষ হলে ওটা ছেড়ে দিবে। তারপর আমাদের নিয়ে হয়ত সোমালিয়ান কোস্টে ওদের আস্তানায় চলে যাবে।
খাবার আছে ২০-২৫ দিনের : এমভি আব্দুল্লাহর চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ অডিও বার্তায় বলেন, আমাদের জাহাজে ২০-২৫ দিনের খাবার আছে। আর ২০০ মেট্রিক টন ফ্রেশ ওয়াটার আছে। আমরা অলরেডি সবাইকে বলছি ফ্রেশ ওয়াটার সেইফলি ইউজ করতে। আর প্রভিশনও আমরা সেভাবে হ্যান্ডেল করব। একটা প্রবলেম হচ্ছে আমাদের জাহাজে কোল কার্গো আছে প্রায় ৫৫ হাজার, যা বিপজ্জনক। ওটার ফায়ার হ্যাজার্ড (অগ্নি ঝুঁকি) আছে। তারপরে মিথেন কনসেনট্রেনশনও বাড়ে। লাস্ট অক্সিজেন লেভেল ৯-১০ পারসেন্ট এরকম ছিল। এটা একটু রেগুলার মনিটর করতে হয়। আবার বেড়ে গেলে বিভিন্ন এক্সপার্টের পরামর্শ নিতে হবে। দুস্যদের হাত থেকে বাঁচতে আকুতিও জানান আতিক। দেশে পরিবারের সদস্যদের দেখে রাখতে কোম্পানির কাছে আবেদন জানান তিনি।
অডিওতে তিনি বলেন, এটা একটু ব্যবস্থা করেন স্যার কাইন্ডলি। আমাদের জন্য দোয়া করবেন স্যার। আমাদের পরিবারকে একটু দেখবেন স্যার। ওদেরকে সান্ত্বনা জানাবেন।
বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ দস্যুদের কবলে পড়া নিয়ে যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশন (ইউকেএমটিও) তাদের ওয়েবসাইটে দুটি বার্তা প্রকাশ করে মঙ্গলবার। ওই বার্তা দুটিতে বলা হয়, সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল পূর্ব দিকে বাংলাদেশি জাহাজ ছিনতাইয়ের এই ঘটনা ঘটেছে। একটি বড় ও একটি ছোট নৌযানে করে বেশ কয়েকজন লোকজন জাহাজে উঠে সেটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। ওই অঞ্চলে চলাচলকারী জাহাজকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে ইউকেএমটিও’র বার্তায়।
এর আগে চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ আইএনএস সুমিত্রা অভিযান চালিয়ে ৩৬ জন ক্রুসহ দুটি ইরানি ফিশিং বোট সোমালি দস্যুদের হাত থেকে উদ্ধার করে।
ছেলেকে সুস্থ ফিরিয়ে দিন : ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান দস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ’র চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খানের মা তার সন্তানকে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনার আকুতি জানিয়েছেন। আতিকুল্লাহর বাসা চট্টগ্রাম নগরীর নন্দনকানন। আকস্মিকভাবে প্রধান উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটির এমন বিপদের মুখে পড়া নিয়ে দিশেহারা পরিবারটির সদস্য ও স্বজনরা। আতিকুল্লাহ’র পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মিনা আজমাইন স্বামীর এমন বিপদের কথা শুনেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পঞ্চাশোর্ধ বৃদ্ধা মা আতিকুল্লাহ’র তিন মেয়েকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন। উদ্বেগ-আশঙ্কা নিয়ে স্বজন ও বন্ধুবান্ধবরাও ছুটে আসছেন ওই বাসায়। কেউ কেউ সান্ত্বনা দেন পরিবারটির সদস্যদের। আতিকুল্লাহ’র মা শাহনূর আক্তার জানান, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আতিকুল্লাহ তার স্ত্রীকে হোয়াটস অ্যাপে ফোন করে তাদের দস্যুর হাতে জিম্মি হওয়ার খবর জানান। এরপর সন্ধ্যার দিকে ফের ফোন করে জানান, জিম্মি সব নাবিকের মোবাইল ফোন দস্যুরা কেড়ে নিচ্ছে।
শাহনূর আক্তার বলেন, আমি আমার ছেলেটাকে সুস্থ অবস্থায় ফেরত চাই। তার তিনটা ছোট ছোট মেয়ে। বৌ অন্তঃসত্ত্বা। শোনার পর থেকে বৌ খালি কান্না করছে। তার প্রেসার বেড়ে যাচ্ছে। নাতনিরা পাঁচ মিনিট পর পর এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। সরকারের কাছে আমার দাবি, আমার ছেলেকে দ্রুত সুস্থ অবস্থায় আমার কাছে ফিরিয়ে দিন। আমি দেশবাসীর কাছে আমি দোয়া চাই।
আতিকুল্লাহদের বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার বরকল ইউনিয়নে। তার বাবা বেঁচে নেই। দুই ভাইয়ের মধ্যেই তিনিই বড়। আরেকভাই এখনও পড়ালেখায় আছেন। তিন মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে ইয়াশা ফাতিমা তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। মেঝ মেয়ে উমাইজা মাহাবিন প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট মেয়ে খাদিজা মাহাবিনের বয়স মাত্র দুই বছর।
শাহনূর জানান, তিন মাস আগে আতিকুল্লাহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে যোগ দেন। এর ১৫-২০ দিন পর একবার জাহাজ নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছিলেন। তখন একবার বাসায় এসেছিলেন। সে-ই ছেলের সঙ্গে শেষ দেখা।
যেভাবেই হোক আমাদের ছাড়ান আম্মু! : ‘আম্মু, ওরা মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে। এখনো ইফতার করি নাই। তারা খাবার দিলে ইফতার করব। কবির গ্রুপের চাচার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। যেভাবেই হোক, আমাদের ছাড়ানোর ব্যবস্থা করেন, আম্মু।’
ভারত মহাসাগরে দস্যুদের হাতে জিম্মি এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের চতুর্থ প্রকৌশলী তানভীর আহমেদ মঙ্গলবার রাত আটটায় সর্বশেষ মুঠোফোনে মা জোছনা বেগমকে এই আকুতি জানিয়েছেন। এরপর ছেলের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। ছেলের চিন্তায় জোছনা বেগম ছুটে আসেন নগরীর আগ্রাবাদে কবির গ্রুপের কার্যালয়ে। ছেলের সঙ্গে কথোপকথনের তথ্য তুলে ধরে জোছনা বেগম উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, মোবাইল কেড়ে নেওয়ার আগে ছেলের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা হয়। জাহাজটি সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছে দস্যুরা। তবে তারা কারও গায়ে হাত তোলেনি। জাহাজে পানির পরিমাণ কম। নাবিকদের জন্য দোয়া করতে বলেছে। জোছনা বেগমের মতো গতকাল সকাল থেকে একে একে জিম্মি জাহাজের নাবিকদের স্বজনেরা কবির গ্রুপের কার্যালয়ে ছুটে আসেন। জাহাজে জিম্মি নাবিক নুরউদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসও কবির গ্রুপের কার্যালয়ে ছুটে আসেন। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার লিচুতলার বাড়িতে আড়াই বছরের সন্তানকে রেখে স্বামীর খোঁজ নিতে আসেন তিনি। তিনি বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কথা হয় নুরউদ্দিনের সঙ্গে। তখন জানিয়েছিলেন তাদের জাহাজ সোমালিয়ার উপকূলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে দস্যুরা। জাহাজে তখন ৫০ জনের মতো দস্যু ছিল। সবার হাতে ছিল অস্ত্রশস্ত্র। পরে একটি অডিও বার্তা পাঠায় তার মুঠোফোনে। নুরউদ্দিনের অডিও বার্তায় শোনা যায়, ফাইনাল কথা, এখানে টাকা না দিলে একজন একজন করে মেরে ফেলবে বলছে। তিনি বলেন, আমি তাকে ফেরত চাই, আর কিছুই না।
জিম্মি জাহাজের নাবিক শফিকুল ইসলামের স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। ভাইয়ের খোঁজ নিতে ছুটে আসেন বড় ভাই দিদারুল আলম। তিনি বলেন, শফিকুল ইসলামের স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। মঙ্গলবার মুঠোফোনে কথা হলে শুধু টেনশন না করতে বলেছেন।
নাবিক আইনুল হকের মা লুৎফে আরা বেগম এক সন্তানকে নিয়ে ছুটে এসেছেন কবির গ্রুপের কার্যালয়ে। আইনুল হকের মায়ের আকুতি, যেভাবেই হোক আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিন। ইনকিলাব
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com