ডেস্ক রির্পোট:- রাজধানীতে চার দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলন শেষে প্রশাসন চালানোর আরো অধিক ক্ষমতা নিয়েই নিজ-নিজ কর্মস্থলে ফিরে গেছেন ডিসিরা। ডিসিদের দায়িত্ব বেড়েছে পাশাপাশি ক্ষমতা বেড়েছে। সম্মেলনে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোসহ মাঠপর্যায়ের সমস্যা সমাধানে তারা ৩৫৬টি প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ৩৫টি দফাসহ প্রায় ৩৫০ নির্দেশনা সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে ডিসিরা পেয়েছেন। চলতি বছরের গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে সরকারের নির্দেশানা অনুযায়ী রির্টানিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করায় প্রধানমন্ত্রীর ধন্যবাদ পেয়েছেন। এর আগে অনেক ডিসি সম্মেলন হয়েছে, তখনকার ডিসিরা এতে বেশি ক্ষমতা পাননি বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানাগেছে।
সম্মেলনে যেসব ক্ষমতা পেলেন, পদোন্নতি ছাড়া মাঠ প্রশাসন থেকে ডিসিদের প্রত্যাহার নয়, আদালতের রায়ে নিরঙ্কুশ-ভাবে জমির মালিকা প্রমাণিত হয়েছে কিংবা আবেদনকারীর বৈধ প্রমাণাদি ও দলিলাদি আছে, সেইসব সম্পত্তির রেকর্ড সংশোধন করে মালিকানা হস্তান্তের ক্ষমতা, মোবাইল কোর্ট অ্যাক্টের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি,অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে জেলা প্রশাসকদের মনিটরিং করা,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব প্রতিরোধ করা, পরীক্ষার সময় প্রশ্নপত্র ফাঁস না হওয়া, ছাত্র-ছাত্রীদের বিরুদ্ধে সাইবার বুলিং ও সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ, মাঠ প্রশাসনের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করার ক্ষমতা এবং রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ ডিসিদের ৪ কৌশলে কাজ করার নির্দেশনা পেয়ে ফিরলেন। তবে জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদ বিদ্যমান আইনের কোনো সমাধন বরাবরের মতো এবারও জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) মিলেছে শুধু আশ্বাস। অথচ নিজেদের ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোসহ মাঠপর্যায়ের সমস্যা সমাধানে তারা ৩৫৬টি প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিলেন। তবে এই প্রথম ডিসিরা অনেক ক্ষমতা নিয়ে ফিরলেন বলে জানা গেছে। এছাড়া চার দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলনে জনগুরুত্বর্পুণ প্রস্তাবে বেশির ভাগই আমলে নেয়া হয়নি। বরং প্রধানমন্ত্রীর ৩৫টি দফাসহ প্রায় ৩৫০ নির্দেশনা সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে তারা পেয়েছেন। এতে ডিসিদের দায়িত্বের পাশাপাশি ক্ষমতা বেড়েছে। কিন্তু সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে কাঙ্খিত সাড়া না মেলায় অনেকের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক ডিসির সঙ্গে আলাপ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। ডিসি সম্মেলনে ৩৫৬টি প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন ডিসিরা। বেশিরভাগই হচ্ছে রাস্তাঘাট সংস্কারের ২২টি। পৌরসভা ও উপজেলার যেসব রাস্তা সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছেন ডিসিরা এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
এ অধিবেশনে জেলা প্রশাসকগণ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের মতামত ব্যক্ত করেন ও প্রশ্ন করেন। নতুন আইনের বিধিমালা, খাসজমি, নামজারি, হাট ও বাজার, ভূমি অফিস নির্মাণ, জলমহাল, পার্বত্য অঞ্চলের ভূমি ব্যবস্থাপনা, কোর্ট অব ওয়ার্ডস, ভূমি সংশ্লিষ্ট জনবল ও প্রশিক্ষণ, ডিজিটালাইজেশন, ভূমি ব্যবস্থাপনায় উদ্ভাবন-সহ ভূমি সংশ্লিষ্ট নানা বিষয় উঠে আসে কার্য অধিবেশনের আলোচনায়।ভূমি রেজিস্ট্রেশন ও ভূমি জরিপ ব্যতীত, ভূমি রাজস্ব ও ভূমি ব্যবস্থাপনা সহ ভূমি সংক্রান্ত অন্যান্য সকল সেবা প্রদানে কালেক্টর হিসেবে জেলা পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক। সমবায় ভিত্তিক কৃষি, সমবায় ভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অনেক কিছু করার সুযোগ আছে। সমবায় ব্যবস্থাপনাকে আরো বেশি গতিশীল ও শক্তিশালী করতে ডিসিদের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী। চার দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলনে এসবের অনেক কিছু আমলে নেয়া হয়নি। বরং প্রধানমন্ত্রীর যেসব নির্দেশনা সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে তারা পেয়েছেন। এতে তাদের দায়িত্ব বেড়েছে। কিন্তু সুযোগ-সুবিধার পেলেও ব্যয় করার ক্ষমতার বিষয়ে সাড়া না মেলায় অনেকের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।একাধিক ডিসির সঙ্গে আলাপ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে এবার ডিসি সম্মেলনে তথ্য প্রকাশে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ডিসিদের নিরুশাহীত করা হয়েছে।
ডিসি সম্মেলনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ভূমি ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, স্থানয়ি সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম জোরদার, দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কাযক্রম, স্থানীয় পযায়ে কর্ম-সৃজন ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি কর্মসূচি, তথ্যও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ই-গভেনের্ন্স, শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সম্প্রাসারণ, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ, পরিবেশ সংরক্ষণও দুষণ রোধ, ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন এবং উন্নয়নমুলক কার্যক্রমের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও সম্বনয় করা। এছাড়া সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিরা (ডিসি ও ইউএনও) মাঠ প্রশাসনে নানা সমস্যার সম্মুখীন হন। এসব সমস্যা ডিসি সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারের শীর্ষ মহলে তুলে ধরা হয়েছে। মাঠপর্যায়ের সমস্যাগুলো ডিসিরা সুপারিশ ও প্রস্তাব আকারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়ে থাকেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রস্তাবগুলো সম্মেলনের কার্যপত্রে অন্তর্ভুক্ত হয়। গত ২০২৩ সালের ডিসি সম্মেলনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি তুলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, গত বছর ডিসি সম্মেলনে ২১২টি সিদ্ধান্ত ছিল। এরমধ্যে ১৩০টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়েছে। ৮২টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন। এসব সিদ্ধান্ত গুলো বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ। কোনো ক্ষেত্রে প্রকল্প নিতে হবে। কোনো ক্ষেত্রে আইনি সংশোধন দরকার। এসব বিষয়েও কাজ চলছে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের চতুর্থ দিনের দ্বিতীয় ও শেষ অধিবেশনে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়নও সমবায় মন্ত্রণালয়ের কার্য অধিবেশন শেষে স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, এডিস মশার প্রকোপ কমাতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জন্য পাঁচ কোটি ও সারাদেশের জন্য ৪০ কোটি টাকার ওষুধ কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের জনসচেতনতা বাড়াতে ও প্রচারণায় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাজুল ইসলাম বলেন, পুরো পৃথিবী অনুধাবন করছে যে এডিস মশা মোকাবিলা করতে হলে সবচেয়ে বেশি দরকার বা হাতিয়ার ৯০ শতাংশ সচেতনতা। আর বাকি ১০ শতাংশ টেকনিক্যাল বা ওষুধ। তিন দিনে একদিন জমা পানি ফেলে দিন। এটা যদি সম্ভব হয় তাহলে এডিস মশার প্রজননটা আমরা রোধ করতে পারবো। তিনি বলেন, নির্বাচন তো হয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশন যেসব সহযোগিতা চায় তা করবো। তবে নির্বাচন সম্পর্কে আমাদের কোনো ইন্টারফেয়ার নাই। নির্বাচনের ব্যাপারটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের অংশ নয়। এটা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। নির্বাচন কমিশনকে এ ব্যাপারে পুরো ক্ষমতা দেওয়ার আছে।
ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কার্য অধিবেশনে ভূমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ বলেছেন, ডিসিরা নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো-টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। সততা ও স্বচ্ছতার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি জেলা প্রশাসকদের অবহিত করেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে এবং এসব নির্দেশনা মেনে চলা গণকর্মচারীর দায়িত্ব। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ইতোমধ্যে বিধিমালা ছাড়াই বিচারিক আদালতের এখতিয়ার অনুযায়ী ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনে মামলা গৃহীত হয়েছে। ভূমিমন্ত্রী বিধিমালা জারির সাথে সাথে এই আইনের মাধ্যমে ভুক্তভোগী ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতিকার প্রদানের জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভূমি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট আজকের কার্য অধিবেশনে ভূমি সচিব মো. খলিলুর রহমান, ভূমি আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে এম শামিমুল হক, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সবুর মন্ডল, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদসহ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং ভূমি মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং বিভাগীয় কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন।## ইনকিলাব
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com