ডেস্ক রির্পোট:- আমাদের চারপাশের প্রকৃতিতে রয়েছে নানা রকম গাছ, উদ্ভিদ ও লতাগুল্ম। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি এসব প্রাকৃতিক সম্পদগুলো আমাদের শারীরিক বিভিন্ন অসুখ-বিসুখে ইউনানি চিকিৎসায় ওষুধ হিসেবে প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এমনই এক ঔষধি গুণসমৃদ্ধ ভেষজ লতাগুল্ম রিফুজি লতা। এই উপকারী লতাটি একসময় কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার এই জনপদের ঝোপঝাড়, বনবাদাড় ও বাড়ির পাশের গাছে উল্লেখযোগ্য হারে জড়িয়ে থাকতে দেখা যেত। তবে সময়ের পরিক্রমায় নানা রোগের চিকিৎসায় আধুনিকায়নের ফলে আর ভেষজ ওষুধের প্রতি মানুষের অনাগ্রহের কারণে ও বনানী স্বল্পতায় এই জনপদের প্রকৃতি থেকে এই ঔষধি লতাটির উপস্থিতি দিন দিন কমে আসছে। এতে করে এই ঔষধি লতাগুল্মটি বিলুপ্তির হুমকিতে পড়ছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
রিফুজি লতার বৈজ্ঞানিক নাম Mikania micantha। এটি এমনি এমনিই যেখানে সেখানে জন্মায়। এই লতা অন্য গাছ বা ঝোপঝাড়ে বেড়ে ওঠে। এটি অতি বৃদ্ধিপ্রবল জাতীয় একটি লতাগুল্ম।
জানা গেছে, এলোপ্যাথি চিকিৎসা এই জনপদের মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছার আগে এই অঞ্চলের মানুষ নানা রোগে এই লতাটি ব্যবহার করতেন। দিন দিন আধুনিক চিকিৎসার উৎকর্ষের ফলে রিফুজি লতাসহ অন্যান্য ভেষজ উদ্ভিদ ও গাছ পরিবেশ থেকে কমতে শুরু করে। এতে করে এসব প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ কমতে থাকার কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি এই অঞ্চলের মানুষ হারাচ্ছে প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা আয়ুর্বেদ চিকিৎসার উপকরণ।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে রিফুজি লতার অসামান্য ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। উপকারী এই লতা ও তার পাতা প্রাচীনকাল থেকেই মানবদেহের নানা রোগ নিরাময়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে এসেছে। রিফুজি লতার পাতার রস নিয়মানুযায়ী খেলে প্রস্রাবের ইনফেকশন রোধ হয় এবং প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ভালো হয়।
মানবদেহের লিভারের সমস্যায় এই পাতার রস উপকারে আসে। চোখ লাল হওয়া রোগে এই পাতার রস পরিমাণ মতো খেলে অল্প সময়েই আরোগ্য মেলে। পাকস্থলী প্রদাহ হলে আদার সাথে তিনটি পাতা চিবিয়ে খেলে প্রতিকার পাওয়া যায়। শরীরের কাটাছেঁড়ায় এই লতার পাতা পিষে ক্ষতস্থানে লাগালে রক্ত বন্ধ হয়ে যায় এবং ক্ষতস্থানে একই নিয়মে ব্যবহার করলে তা ভালো হয়ে যায়।
এ পাতার রস নিয়মিত খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ থাকে। চিকেন পক্স বা হাম হলে এ পাতার রস পানির সাথে মিশিয়ে পুরো শরীরে মাখলে এ রোগ থেকে আরোগ্য পাওয়া যায়। রক্তে ইনফেকশন দেখা দিলে পাতার রস সপ্তাহ ধরে খালি পেটে আধা কাপ পরিমাণ এক চা চামচ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। পেটের এসিডিটি ও গ্যাস্ট্রিক সারাতে রিফুজি পাতার রস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিষাক্ত পোকামাকড় কামড় দিলে রিফুজি পাতার রস দিয়ে ধুয়ে ফেললে উপশম পাওয়া যায়। চুলকানি, একজিমা, দাদ হলে এই পাতার রস দিয়ে ধুয়ে রস লাগাতে থাকলে এসব রোগ থেকে নিরাময় পাওয়া যায়। মুখের মেছতা দূর করতে হলুদের সাথে লেবুর রস হয়ে পাতার রস মিশিয়ে লাগালে মুখের মেছতা ভালো হয়ে যায়। এ পাতার রস কাঁচা হলুদের সাথে মিশিয়ে শরীরে লাগালে শরীর ঠান্ডা থাকে এবং শরীরের কালচে দাগ দূর হয়। খোসপাঁচড়ার চিকিৎসায় ফলপ্রসূ ওষুধ রিফুজি লতার পাতা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা আছমত মিয়া বলেন, ছোটবেলায় হাত-পা বা শরীরের কোনো অংশ কেটে গেলে রিফুজি পাতা পিষে কাপড় দিয়ে বেধে দিলে রক্ত বন্ধ হয়ে যেত। এতে ব্যথানাশক ওষুধও খেতে হতো না। এই আধুনিক সময়ে এসে এখন আর এভাবে কাউকেই চিকিৎসা নিতে দেখা যায় না। এখন আধুনিক চিকিৎসার প্রতি মানুষজন ঝুঁকে গেছে। যার ফলে রিফুজি লতার গুরুত্ব কমে গেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার (ইউনানি) ডা. সোহেল রানা কালবেলাকে বলেন, প্রাকৃতিক গাছগাছালির মাধ্যমে দেওয়া আয়ুর্বেদ চিকিৎসা ব্যবস্থা দিন দিন হ্রাস পাওয়ার কারণে প্রকৃতি থেকে ভেষজ উদ্ভিদ, লতা ও গাছ বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে। তবে প্রধানমন্ত্রী ইউনানি চিকিৎসাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইউনানি চিকিৎসক ও ওষুধ সরবরাহ করেছেন। আমাদের সকলের দায়িত্ব ভেষজ উদ্ভিদ, লতা ও গাছ লাগানো। এতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাবে এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিহীন চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেষজ বাগানে নানা ধরনের ঔষধি গাছ সংরক্ষিত আছে।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com