গুলশান বনানী উত্তরাসহ সব আবাসিক এলাকায় একই ভবনে বিশ্ববিদ্যালয় রেস্টুরেন্ট হাসপাতাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার ব্যাংক সেলুন ও আবাসন ♦ আজ থেকে রাজউকের অভিযান
ডেস্ক রির্পোট:- রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান, বনানী, উত্তরা, ধানমন্ডি, বনশ্রীসহ অনেক এলাকার আবাসিক চরিত্র হারিয়েছে। এসব এলাকার আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। কিছু ভবনের অর্ধেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অন্য অংশে আবাসিক। আবার কিছু ভবনে অর্ধেক শপিং মল, ওপরের অংশে আবাসন। আবার কিছু ভবনে রেস্টুরেন্ট, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ নানা বাণিজ্যিক স্থাপনা রয়েছে।
অধিকাংশ ভবন মালিক অনুমোদনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান করে থাকেন। অনেক আবাসিক এলাকার সড়কের পাশে এখন আবাসিক কাম বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মিত হচ্ছে। আবার কিছু ভবনে মিশ্র ব্যবহারের অনুমোদন নিলেও পুরোটাই বাণিজ্যিক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ফলে এসব এলাকা এখন আবাসিক এলাকার রূপ পরিবর্তন হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, বনানী ১০ নম্বর সড়কে ৪৬, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউর একটি সাততলা ভবনে চারটি রেস্টুরেন্ট। নিচতলায় তাজমহল টেকওয়ে, হাজি বিরিয়ানি, তৃতীয় তলায় মেজবানি লাউঞ্জ, সপ্তম তলা ও ভবনের ছাদজুড়ে রয়েছে কফি ক্যাফে। বাণিজ্যিক এ ভবনটিতে একটি লিফট ও সরু একটি সিঁড়ি রয়েছে। একইভাবে বনানীর স্টার কাবাব রেস্টুরেন্টটি ১৭ নম্বর রোডের বহুতল ভবনের তিন তলাজুড়ে গড়ে উঠেছে। চতুর্থ তলায় রয়েছে কমিউনিটি সেন্টার। রেস্টুরেন্টের আন্ডারগ্রাউন্ডে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। এই রেস্টুরেন্টের ঠিক উল্টো দিকে হাউস অব বাসমতি। এ রেস্টুরেন্টটির অবস্থান এই বহুতল ভবনটির নিচতলা ও দোতলায়। ভিতরে ঢুকতেই হাতের বাঁ পাশে রয়েছে কিচেন। যেখানে রয়েছে সিলিন্ডার গ্যাস। কিচেনটি তৈরি করা হয়েছে সিঁড়ির ঠিক নিচে। সিঁড়িটি খুব সরু। অগ্নিকাে বা কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দ্বিতীয় তলা থেকে মানুষ নামার তেমন কোনো জায়গা নেই।
একই অবস্থা গুলশানেও। গুলশান-২ নম্বর গোলচত্বরের কাছাকাছি একটি ভবনের সাত তলায় অবস্থিত ‘বিয়ন্ড বাফেট’ নামের একটি রেস্টুরেন্ট। এখানে লিফট দিয়ে সরাসরি রেস্টুরেন্টটির অভ্যর্থনালয়ে প্রবেশ করতে হয়। আশপাশে দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই জরুরি বহির্গমন সিঁড়িটি কোনদিকে আছে। ফলে এখানে অগ্নিকা ঘটলে সমস্যায় পড়ে যাবেন রেস্তোরাঁয় আগত অতিথিরা। গুলশান ও এর আশপাশে এখন বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক ভবনের ছড়াছড়ি। এর কোনোটি আবাসিক প্লটে রূপান্তর করে বাণিজ্যিক করা হয়েছে, আবার কোনো আবাসিক প্লটে অনুমতি ছাড়াই গড়ে উঠেছে বাণিজ্যিক ভবন। আবাসিক হোটেল, বিভিন্ন এজেন্সির অফিসসহ সারি সারি সুউচ্চ ভবনে শপিং মল, রেস্টুরেন্ট মিলিয়ে এক সময়ের শান্ত-স্নিগ্ধ সবুজ অভিজাত আবাসিক এলাকা তার স্বকীয়তা হারিয়েছে। একই অবস্থা বনানী আবাসিক এলাকার। বনানী বাজারের আশপাশের বিভিন্ন সড়কেই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে বেশি। এর বেশির ভাগই চলছে আবাসিক প্লটে। বনানীর ৬ নম্বর সড়ক, ১২ নম্বর সড়ক, ১২/এ সড়ক, ১৩/এ সড়ক, ১৩/বি নম্বর সড়ক, ১৩/সি সড়ক, ১৩/ই সড়ক, ১৫ নম্বর সড়ক, ১৭ নম্বর সড়ক, ২১ নম্বর সড়ক, ২২ নম্বর সড়ক, ২৭ নম্বর সড়ক, ২৮ নম্বর সড়কে চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, হাসপাতাল, হেলথ সেন্টার, মেডিকেল সার্ভিস, রেস্তোরাঁসহ নানা বাণিজ্যিক স্থাপনা রয়েছে। একই চিত্র রামপুরা বনশ্রী ও দক্ষিণ বনশ্রী এলাকার। দক্ষিণ বনশ্রীর ১০ তলা মার্কেটের ভবনটির নিচ থেকে চার তলা পর্যন্ত শপিং মল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আর ওপরের ফ্ল্যাটগুলো আবাসিক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। একই সঙ্গে বনশ্রীর এইচ ব্লকে এক নম্বর রোডে একটি ভবনের অর্ধেকাংশে নার্সিং প্রতিষ্ঠান, অন্যাংশে আবাসিক ফ্ল্যাট। এ ছাড়া উত্তরা, ধানমন্ডি, মিরপুর, খিলগাঁওসহ অনেক আবাসিক এলাকার ভবন বাণিজ্যিক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আবার বাণিজ্যিক কাম আবাসিক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যদিও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কিছু আবাসিক এলাকায় যেখানে ১০০ ফিট সড়ক রয়েছে সেখানে আবাসিক কাম বাণিজ্যিক অনুমোদন রয়েছে সংস্থাটির। যদিও রাজউকের এ-সংক্রান্ত আদেশ অনেক আবাসিক এলাকায় ব্যত্যয় রয়েছে। সংস্থাটির অনুমোদন ছাড়াই আবাসিক কাম বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নির্মিত হয়েছে।
এ বিষয়ে রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, অনেক আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি। আবাসিক ভবনের নামে অনুমোদন নিয়ে সেখানে রেস্টুরেন্ট গড়ে তোলা হয়েছে, অথচ তাদের বাণিজ্যিক অনুমোদন নেই। এ বিষয়ে আমরা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার উদ্যোগ নিয়েছি। একই সঙ্গে যেসব সংস্থা নকশা না দেখে ট্রেড লাইসেন্স, পানির লাইন, বিদ্যুতের সংযোগ দিয়েছে, রাজউক এরই মধ্যে সংস্থাগুলোকে চিঠি দিয়েছে যেন তারা ট্রেড লাইসেন্স, পানির সংযোগ ও বিদ্যুতের লাইন বিচ্ছন্ন করে। তিনি আরও বলেন, যেসব আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আগামীকাল (আজ সোমবার) থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় আবাসিক কাম বাণিজ্যিক স্থাপনায় ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া অনেক দিন থেকে বন্ধ রয়েছে। আর যারা ব্যবসায়িক কার্যক্রম করছে তারা অনৈতিকভাবে করছে। তিনি আরও বলেন, ভবনে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধের সরঞ্জাম আছে কি না বা ঝুঁকিপূর্ণ কি না সেটা তদারকি করতে ডিএনসিসি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলেও এখন থেকে আরও কঠোরভাবে পরিচালনা করা হবে।বাংলাদেশ প্রতিদিন
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com