খাগড়াছড়ি:- বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের খাগড়াছড়ি বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে চার বছর আগে যোগদান করে এখনো দায়িত্বে রয়েছেন স্বাগত সরকার। তবে তার বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অভিযোগের অন্ত নেই। বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের এমন কোনো খাত নেই, যেখানে তিনি স্বেচ্ছাচারিতা কিংবা অনিয়ম করেন না। পোস্ট-পেইড মিটারে ভূতুড়ে বিল, প্রি-পেইড সংযোগ দিতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আরও অভিযোগ, বিদ্যুৎ অফিসেরই একজন কর্মচারী দিয়ে করেন মিটারের ব্যবসা।
বিদ্যুৎ সংযোগ সম্প্রসারণে খুঁটি প্রতি তিনি নেন ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা, আর প্রতি কিলোওয়াট লোড বৃদ্ধিতে গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করেন অতিরিক্ত ১০ গুণ অর্থ। অফিসের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সঙ্গে নিয়ে চার বছর ধরে চলছে নির্বাহী প্রকৌশলী স্বাগত সরকারের অনিয়মের এই কাণ্ডকারখানা।
অভিযোগের সূত্র ধরে সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহক হিসেবে প্রথমেই ফোন দেওয়া হয় লাইনম্যান সাহায্যকারী জামান রিয়াদকে। আবাসিক প্রি-পেইড সংযোগের এক কিলোওয়াট লোড বৃদ্ধিতে করণীয় জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রতি কিলোওয়াট লোড বাড়াতে খরচ লাগবে আড়াই হাজার টাকা। এর মধ্যে ২ হাজার টাকা সরকারি ফি এবং বাকি ৫০০ টাকা অফিসের আনুষঙ্গিক খরচ।
২৩০ টাকা সরকারি ফি ব্যাংকে প্রদানের মাধ্যমে প্রি-পেইড সংযোগ পাওয়ার কথা, তবে কেন সরকারি খরচ আড়াই হাজার টাকা চেয়েছেন তিনি, এমন প্রশ্নের উত্তরে লাইনম্যান সাহায্যকারী জামান রিয়াদ বলেন, ‘এসডি সাকিব স্যার (উপসহকারী প্রকৌশলী মো. নাজমুস সাকিব) এবং এক্সিয়েন স্যারের (নির্বাহী প্রকৌশলী স্বাগত সরকার) নির্দেশেই আমি এই টাকা নিয়ে থাকি। আপনি তাদের সঙ্গে কথা বলুন।’
এরপর গ্রাহক পরিচয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে উপসহকারী প্রকৌশলী মো. নাজমুস সাকিব বলেন, ‘অফিশিয়াল নিয়ম যদি ফলো করেন, আবাসিক সংযোগের লোড বাড়াতে হলে ১০০ ওয়াটের একটা সোলার প্যানেল বসিয়ে কাগজ জমা দিতে হবে। তবে সোলার প্যানেলের কাগজ দিতে না পারলে আমাদের লোকজন ম্যানেজ করে দেয়। আর সেজন্য তারা আড়াই হাজার টাকা নেয়।’
শুধু লোড বৃদ্ধিতেই নয়, নতুন প্রি-পেইড সংযোগ পেতেও হয়রানির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা। একই সঙ্গে মোটা অঙ্কের উৎকোচ দিতে হচ্ছে নির্বাহী প্রকৌশলীকে। মিটারও কিনতে হয় নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছ থেকেই। মিটার বিক্রির জন্য প্রকৌশলী স্বাগত সরকার দায়িত্ব দিয়েছেন ‘টিটু সূত্রধর’ নামে একজন লাইনম্যান সাহায্যকারীকে। টিটু সূত্রধরকে দিয়ে অফিসেই মিটারের রমরমা বাণিজ্য চলছে তার। বাজারের স্বাভাবিক দরে নয়, তিনি গ্রাহকদের কাছে মিটার বিক্রি করেন বাড়তি দামে। গ্রাহকরাও হয়রানি এড়াতে বাধ্য হন তার কাছ থেকে মিটার কিনতে। নিয়ম অনুযায়ী আবেদনের সাত দিনের মধ্যে প্রি-পেইড সংযোগ পাওয়ার কথা গ্রাহকদের। কেউ যদি টিটু সূত্রধরের কাছ থেকে মিটার না কিনে বাজার থেকে কেনেন, তবে সেই গ্রাহকের ফাইল আটকে থাকে এক থেকে দেড় মাস পর্যন্ত। অনুসন্ধানে এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গিয়েছে।
খাগড়াছড়িতে বর্তমানে ৫৬০০ প্রি-পেইড মিটার রয়েছে। যার মধ্যে প্রকৌশলী স্বাগত সরকারের দায়িত্বে থাকার সময়ে গত চার বছরে স্থাপিত হয়েছে ৩ হাজারেরও বেশি মিটার। হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া বাকি সব গ্রাহককে মিটার কিনতে বাধ্য করা হয়েছে বিদ্যুৎ অফিস থেকেই।
খাগড়াছড়ি সদরের ইসলামপুর এলাকার বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ সৈকত বলেন, ‘অস্বাভাবিক বিলের কারণে পোস্ট-পেইড মিটারের পরিবর্তে প্রি-পেইড সংযোগ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট লাইনম্যানদের জানাই। তারা এর জন্য ১২ হাজার টাকা চেয়েছেন, বলেছেন এর কমে সংযোগ দেওয়া যাবে না। এটা নাকি অফিসের নিয়ম।’
কুমিল্লা টিলা এলাকার বাসিন্দা খোরশেদ আলম বলেন, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে আমার বাড়ির সামনে একটি খাম্বা (বৈদ্যুতিক খুঁটি) হেলে পড়েছিল। এ নিয়ে আমি বেশ কয়েকবার বিদ্যুৎ অফিসে গিয়েছি। তারা এটি সোজা করে দিতে ২০ হাজার টাকা চেয়েছে। এত টাকা দেওয়া সম্ভব নয় বলে পরে ওই খাম্বাটিকে দড়ি দিয়ে কোনোরকমে আমগাছের সঙ্গে বেঁধে রেখেছি।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী স্বাগত সরকার বলেন, ‘সরকার তো একেক সময় একেক নিয়ম দেয়। তবে সবকিছু প্রতিপালন করা যায় না, সব নিয়ম তো অ্যাপ্লাই করা যায় না।’
বিদ্যুতের নতুন সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে প্রকৌশলী স্বাগত সরকার বলেন, ‘সরকারিভাবে একটি আবাসিক ভবনে কেবলমাত্র একটি মিটার দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে ভবনের মালিকরা প্রতিটি ফ্ল্যাটের জন্য আলাদা আলাদা মিটার নিয়ে থাকেন। কোনো কোনো ভবনে আমরা ৮ থেকে ১০টি মিটারও দিয়েছি। এ কারণেই গ্রাহকরা আমাদের বাড়তি টাকা দেয়।’
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে বিউবো রাঙামাটি সার্কেলের (পরিচালন ও সংরক্ষণ) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. কামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কোনো অজুহাতেই অতিরিক্ত টাকা আদায়ের সুযোগ নেই। অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে সত্যতা পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’খবরের কাগজ
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com