ডেস্ক রির্পোট:- মৃত্যুর পরও যেন শান্তি নেই রাজধানীবাসীর। ঘুষ নামের ব্যাধি থেকে মুক্ত হতে পারেন না তারা। মৃত মানুষকে কবর দিতেও তার পরিবারকে গুনতে হয় অতিরিক্ত টাকা। সিটি করপোরেশনের কর্মীর পরিচয়ে নেওয়া হয় এই ঘুষ। সম্প্রতি এমন চিত্র ধরা পড়েছে। ঘুষ নেওয়া ব্যক্তিদের পিছু নিয়ে হাতেনাতে ধরলেও সদুত্তর মেলেনি তাদের কাছ থেকে।
রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের মোহরার ফেরদৌসের কক্ষে ক্যামেরার ধরা পড়ে টাকা নেওয়ার এমনই এক দৃশ্য। কবরের জন্য নির্ধারিত ফি ৫শ’ টাকা দেওয়া হলেও কিছুক্ষণের মধ্যে কবর দেখভালকারী একজন এসে আদায় করেন আরও ৫শ’ টাকা। কীসের টাকা জানতে চাইলে বলেন, এটা কবর খোঁড়ার খরচ। তিনি বলেন, এটা অন্য টাকা। আমি চারটা কবর খুঁড়েছি তার টাকা। তবে কবর খোঁড়ার টাকা হলে মোহরারকে কেন দেওয়া হচ্ছে- এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি গোরখোদক।
তবে বিষয়টি নিয়ে রহস্যজনক আচরণ করেন রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের মোহরার ফেরদৌস। কক্ষে থেকে বেরিয়ে গেলেও তাকে অনুসরন করি আমরা। অতিরিক্ত এই ৫শ’ টাকা কিসের, তার সদুত্তর দিতে পারেননি ফেরদৌস। বারবার বলে অন্য টাকা এটা, তবে কীসের টাকা সেটা বলতে পারেননি তিনি।
রায়েরবাজার কবরস্থানে প্রতিদিন গড়ে ৫ জনের দাফন করা হলে মাসে দাফন করা হয় অন্তত ১৫০ জনকে। প্রতিদিন কম করে গড়ে ২ হাজার টাকার অনিয়ম হলেও মাসে দাঁড়ায় ৩ লাখ টাকায়। যা বছরে ৩৬ লাখে পৌঁছে যায়।
মরেও শান্তি নেই, কথাটি শুধু কথার কথা নয়, রাজধানী ঢাকায় এখন বাস্তব ঘটনায় রূপ নিয়েছে। মৃত ব্যক্তিকে দাফন করতে গেলে পদে পদে দিতে হচ্ছে ঘুষ। উচ্চবিত্তের তাতে ভ্রুক্ষেপ না থাকলেও এই ব্যাধি যেন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের জন্য। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে কবর নিয়ে চলছে এমন বাণিজ্য। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সঙ্গে কবরের চাহিদা বাড়ার সুযোগে নিয়ম না মেনেই লাশ দাফনের জন্য নেওয়া হচ্ছে ঘুষের টাকা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ডিএনসিসির প্রায় ১৯৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় এক কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস। উত্তর সিটির ছয়টি কবরস্থানে সবচেয়ে বেশি দাফন হয় মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, একসঙ্গে নতুন কবর করা হয়েছে ৭টি।
গোর খোদকরা বলছেন, প্রতিদিনই এই কবরস্থানে দাফনের ব্যস্ততা লেগে থাকে। সরকারিভাবে গোর খোদক ৪ জন হলেও সেখানে কবর খোঁড়া, পরিচ্ছন্নতা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেন শতাধিক মানুষ। লাশ দাফনে সরকারি ফি ৫০০ টাকা। এই টাকায় কবর দেওয়া যায় না বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
তারা বলেন, লাশ দাফনে গুনতে হয় ২ থেকে ৫ হাজার টাকা। শুধু লাশ দাফনই নয়, কবর রক্ষণাবেক্ষণের নামেও চাওয়া হয় বাড়তি টাকা। কবর সিন্ডিকেটের ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ভুক্তভোগীর অভিযোগ, এই কবরস্থান থেকে বছরে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় স্থানীয় কাউন্সিলর ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। তাদের বিরুদ্ধে যে কথা বলেছে তাকে এলাকা ছাড়া করা হবে, সেই ভয়ে মুখ খুলতে চায় না কেউ।
মানুষের মৃত্যুতে এমন প্রহসন কেন জানতে চাইলে ডিএনসিসির ৩৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ হোসেন (খোকন) জানান, আগে কবর দেওয়া নিয়ে অনিয়ম হলেও এখন আর কবরবাণিজ্য হয় না। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রশ্নই আসে না। গরিব মানুষের জন্য বিনামূল্যে কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি। তবে কবরবাণিজ্য নিয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন এই কাউন্সিলর।
নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে রায়েরবাজারের এই কবরস্থানে ১৫ থেকে ২৫ বছরের জন্যও সংরক্ষণ করা যায় কবর। রায়েরবাজারে ১৫ বছরের জন্য গুনতে হয় ১০ লাখ আর ২৫ বছরের জন্য গুনতে হয় ১৫ লাখ টাকা। অন্যান্য কবরস্থানে এরচেয়ে অনেক বেশি টাকা দিতে হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। কোথাও কোথাও এই অংক কোটি টাকার ওপরে। কালবেলা
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com