খাগড়াছড়ি:- খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার পুরো পৌর এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে আবর্জনা। পর্যাপ্ত ডাস্টবিন বা নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় বসতবাড়ি ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান যত্রতত্র ময়লা ফেলে। প্রতিদিন ময়লা-আবর্জনা ও দুর্গন্ধকে পাশ কাটিয়ে চলছে জনসাধারণ এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সম্পূর্ণভাবে এসব বর্জ্য পরিষ্কার না করায় পৌর এলাকায় বিভিন্ন স্থানে আবর্জনা দেখা যায়। ফলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। জনসাধারণের বাড়ছে ভোগান্তি। তাছাড়া মাটিরাঙ্গায় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থাকলেও নিজ উদ্যোগে পরিষ্কারের দায়িত্ব নেয়নি কেউ।
সচেতন মহলের মতে, এভাবে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলায় পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে পৌরসভার সৌন্দর্য। বিষয়টিতে উদাসীন অনেকে। পৌর এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না রাখার দায় কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারেন না বলে মন্তব্য করেন তারা।
সরেজমিনে, মাটিরাঙ্গায় পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিতভাবে ময়লা আবর্জনার স্তূপ দেখা যায়। জেলা পরিষদের বিশ্রামাগারের ভেতরে আশপাশের হোটেলের বর্জ্যসহ বিভিন্ন স্থানের ময়লা ফেলা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব ময়লার ফলে বর্জ্যের একটি বিশাল স্তূপ হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ফলে পরিবেশের দারুণ ক্ষতি হচ্ছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে জনসাধারণ। তাছাড়া মাটিরাঙ্গা থানার নিছের মোড়ে পড়ে আছে ময়লার বিশাল স্তূপ। কত বছর থেকে এ স্থানে ময়লা ফেলা হচ্ছে তা ঠিক করে কেউ বলতে পারছেন না।
এদিকে চৌধুরী পাড়ায় যাওয়ার মোড়ে, ঈদগাহের সামনের রাস্তায়, হাসপাতাল পাড়ার মোড়ে, তরকারি বাজারের প্রবেশদ্বারে প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিন, চিপসের প্যাকেট, নষ্ট তরকারি, নষ্ট ফল, কাগজের প্যাকেট, কেক-মিষ্টির বক্স, ওয়ানটাইম কাপ, বাদামের খোসাসহ নানা ধরনের উচ্ছিষ্ট। তাছাড়া মাটিরাঙ্গা পৌরখাল তো ময়লাময় হয়ে আছে বেশ কয়েক যুগ আগ থেকেই।
এক বছর আগে পৌরসভার মাসিক সমন্বয় সভায় পৌরসভা এলাকায় পয়োনিষ্কাশনের জন্য ৬০টি ডাস্টবিনের চাহিদা দেওয়া হয়। ফান্ড স্বল্পতার কারণে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি বলে জানা যায়। তাছাড়া গত ডিসেম্বর মাসে মাসিক সমন্বয় সভায় এক প্রকল্পের অর্থায়নে মাটিরাঙ্গা পৌরসভা বাস্তবায়নে ৩টি স্থানে স্থায়ী ডাস্টবিন স্থাপনের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ১টি মাটিরাঙ্গা বালিক উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন, অন্যটি ৫নং ওয়ার্ডের ফরিদ সেক্রেটারির বাড়ির পাশে, বাকি ডাস্টবিনটি মাটিরাঙ্গা উপজেলা পোস্ট অফিসের পাশে বাবুপাড়া রাস্তা মাথায় স্থাপন করা হলেও এসব ডাস্টবিন প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
মাটিরাঙ্গা পৌর এলাকায় নারী-পুরুষসহ পরিচ্ছন্নতাকর্মী ১০ জন। সপ্তাহে ৬ দিন কাজ করেন তারা। তার মধ্যে ৪ দিন পৌর সদর বা বাজার এলাকায় বাকি ২ দিন হাসপাতাল, থানা ও সেনা জোন এলাকায় বর্জ্য অপসারণের কাজ করেন।
মাটিরাঙ্গা পৌরসভার পরিছন্ন পরিদর্শক মামুনুর রশিদ জানান, গত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ভ্রাম্যমাণ ডাস্টবিন ছিল ১২০টি। ময়লা-আবর্জনা পরিবহনের জন্য দুটি পিকআপ ও দুটি ভ্যান রয়েছে। বর্তমানে ৪০টির মতো ডাস্টবিন থাকলেও বাকি ডাস্টবিনগুলো চুরি বা নষ্ট হয়ে গেছে বলে তিনি জানান। তবে সে সময়ের পর থেকে অদ্যবধি বর্জ্য অপসারণের আর কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।
মাটিরাঙ্গা বাজারের তরকারি ব্যবসায়ী লিটন বলেন, আগে অনেকগুলো ডাস্টবিন ছিল যেখানে আমরা নিয়মিত তরকারির বর্জ্য ফেলতাম এখন ডাস্টবিনগুলো পুরাতন হওয়ায় সেগুলো ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর নষ্ট হয়ে যাওয়া ডাস্টবিনগুলো রাতের আধারে কোথায় গেছে তার কোনো হদিস নেই। তাই আমাদের ময়লা ফেলতে সমস্যা হয়।
মাটিরাঙ্গা ভাতঘরের ম্যানাজার মো. হাসান বলেন, এখানে ময়লা ফেলার জন্য কোনো ডাস্টবিন না থাকায় আমরা ময়লাগুলো রাস্তার ওই পাশে (জেলা পরিষদের বিশ্রামাগার) ফেলে দেই। তাছাড়া শুধু আমি নই, অনেকেইতো এখানে ময়লা ফেলে। এখানে ডাস্টবিন থাকলে আমরা ডাস্টবিনেই ময়লা রাখতাম। বাহিরে ফেলতাম না।
মাটিরাঙ্গা পৌরসভার পেনেল মেয়র-১ মোহাম্মদ আলী বলেন, প্রতি গলির মোড়ে মোড়ে ডাস্টবিন দেওয়ার পরিকল্পনা আমাদের আছে। জনসচেতনতার অভাবে জনদুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জনগণকে। পৌরবাসী সচেতন নয়, তারা ময়লা নির্দিষ্ট স্থানে রাখেন না। তাদের বারবার সতর্ক করে দেওয়া হলেও নিয়ম মানছেন না তারা। মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডেজী চক্রবর্তী বলেন, মাটিরাঙ্গায় বর্জ্য অব্যবস্থাপনার দায় পৌর কর্তৃপক্ষের। এখানে উপজেলা প্রশাসনে কিছু করার নেই। তবে যথাস্থানে বর্জ্য অপসারণে পৌর মেয়রকে অনুরোধ করতে পারেন বলে তিনি জানান।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com