ডেস্ক রির্পোট:- মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের আওতাধীন সামাজিক সুরক্ষার সেলাই মেশিন বিতরণ, মাতৃত্বকালীন ভাতা, ভিজিডি, মহিলা হোস্টেল, কিশোর-কিশোরী ক্লাবসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ও নানা খাতে মোট ৩৬৮ কোটিরও বেশি টাকার অনিয়ম ধরা পড়েছে। মোট ১৮৪ অডিট আপত্তির বিপরীতে জালিয়াতি ও আত্মসাতের মাধ্যমে এই টাকা নয়ছয় করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের এক প্রতিবেদনে এ অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে।
এ বিষয়ে মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির বলেন, সামাজিক সুরক্ষার এসব খাতের অর্থ মূলত সমাজের অসহায় ও দুস্থদের জন্য। আর সেসব টাকা নিয়ে এমন অভিযোগ এলে এটাই প্রমাণ করে, এখন দুর্নীতিটা এমন পর্যায়ে গেছে যে, দুস্থ-অসহায়দের টাকাও নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এর একটি বড় কারণ হচ্ছে দুস্থ-অসহায় নারীরা এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারবে না। তাদের কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতাও নেই। তাই এখন এদের টাকাও নানা অনিয়মের মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘অডিট আপত্তি যেগুলো আছে, সেগুলোর জবাব আমরা তৈরি করেছি। কিছু জবাব পাঠিয়ে দিয়েছি আর কিছু জবাব তৈরি হচ্ছে।’ এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া উল্লেখ করে তিনি বলেন, অভিযোগ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে তো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। তাই যে কর্মসূচি যেভাবে চলছিল সেভাবেই চলতে থাকে।
মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের ওই প্রতিবেদন অনুসারে, মোট ৩৬৯ কোটির বেশি টাকার দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে একই অধিদপ্তরের বেশ কিছু প্রকল্প নিয়ে। এ ক্ষেত্রে মোট ১৯৫টি আপত্তির মধ্যে সম্পূর্ণ ও আংশিক মিলে নিষ্পত্তি হয়েছে ১৮টি। অর্থাৎ ৮৯.৩৯ শতাংশ আপত্তিই নিষ্পত্তির বাইরে আছে।
ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, নানা দুর্নীতি ও অনিয়মে মোট ১৯৫ অডিট আপত্তি দিয়েছে অভ্যন্তরীণ অডিট বিভাগ। এর মধ্যে রাজস্ব খাতে ১০৪টি আপত্তির বিপরীতে টাকার পরিমাণ ২৭১ দশমিক ৭১৯৭ কোটি। অন্যদিকে উন্নয়নের নানা খাতে সর্বমোট আপত্তি ৯১টি যার বিপরীতে টাকার পরিমাণ ৯৭ দশমিক ৬৬৮৪ কোটি। যার মধ্যে রাজস্ব খাতে সম্পূর্ণ নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ৬টি আপত্তি এবং আংশিকভাবে নিষ্পত্তি হয়েছে ৪টি আর এই ১০টি আপত্তির মোট টাকার পরিমাণ ৩৭ লাখ ২৮ হাজার। অন্যদিকে উন্নয়ন খাতে সম্পূর্ণ নিষ্পত্তি হয়েছে ৫টি আপত্তি এবং আংশিকভাবে নিষ্পত্তি হয়েছে ৩টি আর এই ৮টি আপত্তির মোট টাকার পরিমাণ ৯৮ লাখ ৯৩ হাজার। সে ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ও আংশিক মিলিয়ে মোট নিষ্পত্তি হওয়া টাকার পরিমাণ মাত্র ১ কোটি ৩৬ লাখের কিছু বেশি টাকা। অর্থাৎ আপত্তি ওঠা মোট প্রায় ৩৭০ কোটি টাকার মধ্যে ৩৬৮ কোটি টাকারই এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।
প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, রাজস্ব খাতের ১০৪টি আপত্তির মধ্যে ৯৮টি আপত্তিরই নিষ্পত্তি হয়নি, এখনো যার মোট টাকার পরিমাণ ২৭১ কোটিরও বেশি। আর উন্নয়ন খাতে ৯১টি আপত্তির মধ্যে ৮৬টির নিষ্পত্তি এখনো হয়নি, যার মোট টাকার পরিমাণ ৯৬ কোটির বেশি।
এসব অনিয়ম-জালিয়াতির কারণ হিসেবে মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির বলেন, সরকারের বিপরীতে এখন কোনো বিরোধী দল নেই। তাই সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা এসব অনিয়ম-অভিযোগ নিয়ে কথা বলার বা প্রশ্ন করার কেউ নেই। পাশাপাশি সমাজের সচেতন মহলের কেউ যদি এসব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বা কথা বলেন তাহলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাই জবাবদিহি না থাকা এসব অনিয়মের পেছনের একটি বড় কারণ। সে ক্ষেত্রে এসব সমস্যার সমাধানের জন্য দেশে সুষ্ঠু গণতন্ত্রের চর্চার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন তিনি।
অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, সামাজিক সুরক্ষার খাতগুলোতে দুর্নীতি ভুক্তভোগীর জীবনকে যেমন কঠিন করে তেমনি বিচারের দীর্ঘসূত্রতা আরও অনেককে এমন অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হতে উৎসাহিত করে। এ ছাড়া সরকার বা দুদক যখন এসব দুর্নীতির মামলাগুলো পরিচালনা করে তখন অনেক সময় এগুলোর বিচার হতে দীর্ঘ সময় লাগে। তখন যাদের বিরুদ্ধে এই মামলাগুলো হয়, তারা তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করতে থাকেন। ফলে ভুক্তভোগীরা অতঙ্কে থাকেন। এ ক্ষেত্রে এ ধরনের সামাজিক সুরক্ষার মামলাগুলো জনগুরুত্বপূর্ণ মামলা হিসেবে দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন। খবরের কাগজ
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com