ডেস্ক রিরোট:- সারা দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে হাসপাতাল, ক্লিনিক, ব্লাডব্যাংক। লাইসেন্সবিহীন, মানহীন অবৈধ হাসপাতাল খুঁজতে গিয়ে তালিকা ঠেকেছে হাজারের ঘরে। তালিকার পাশাপাশি গত ২০ দিনে অভিযান চালিয়ে ৭২৭টি অবৈধ হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ব্লাডব্যাংক সিলগালা করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ১৫ জানুয়ারি সারা দেশের অনিবন্ধিত হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ও ব্লাডব্যাংকের তথ্য পাঠাতে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ও সিভিল সার্জনদের নির্দেশ দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। তালিকা তৈরির পাশাপাশি চলছিল অভিযান।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী বিভাগে ৩০ হাসপাতাল, ৫২ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ১০ ব্লাড ব্যাংক; বরিশাল বিভাগে সাত হাসপাতাল, ১৫ ডায়াগনস্টিক সেন্টার; চট্টগ্রাম বিভাগে ৩২ হাসপাতাল, ৮২ ডায়াগনস্টিক সেন্টার; রংপুর বিভাগে পাঁচ হাসপাতাল, চার ডায়াগনস্টিক সেন্টার; সিলেটে এক হাসপাতাল, এক ডায়াগনস্টিক সেন্টার; খুলনায় ১০৫ হাসপাতাল, ১৩৯ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ৭৪ ব্লাডব্যাংক; ঢাকায় ৭০ হাসপাতাল, ৪০ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ১০ ব্লাডব্যাংক এবং ময়মনসিংহে ১৬ হাসপাতাল ও ৪৩ ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করা হয়েছে। সারা দেশে ৭২৭টি হাসপাতাল বন্ধ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সারা দেশে লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আমরা প্রায় ১ হাজার লাইসেন্সবিহীন, মানহীন হাসপাতালের তালিকা করেছি। এর মধ্যে ৭২৭টি অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ব্লাডব্যাংক বন্ধ করে দেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কিছু লাইসেন্স করেনি কখনো, অনেক ক্লিনিক পাঁচ বছর আগে লাইসেন্স করেছিল এরপর আর নবায়ন করেনি। কিছু ক্লিনিক আছে যেগুলো আমাদের নীতিমালার শর্ত একেবারেই পূরণ করতে পারেনি। এজন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত এগুলো বন্ধ করে দিয়েছেন।’ রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুল এলাকার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় শিশু আয়ানের মৃত্যুর অভিযোগের পর লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, লাইসেন্স ছাড়াই কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল এ হাসপাতাল।
জানা যায়, বিভিন্ন সময় অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বেশ কিছু দিন এ অভিযান চললেও পরে ঝিমিয়ে পড়ে। ২০২০ সালে এমন অভিযানে নেমেছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। কিন্তু মালিকপক্ষের চাপে অভিযান আলোর মুখ দেখেনি। ফলে অবৈধ অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। ২০২২ সালের ২৫ মে আকস্মিক ঘোষণা দিয়ে অবৈধ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সে উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে অভিযান অব্যাহত রাখার সুপরিশ করেছিল সাধারণ মানুষ থেকে বিশিষ্টজন। এমনকি এ কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়েছিল বাংলাদেশ বেসরকারি হাসপাতাল মালিক সমিতিও। ওই সময় বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান জরিমানাসহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। লাইসেন্স নবায়নের সময়ও বেঁধে দেওয়া হয় কিছু প্রতিষ্ঠানকে। তবে পরবর্তীতে সে অভিযানের গতি কমে এলে আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠে অবৈধ সেবাপ্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর ডেঙ্গুর ব্যাপকতা বাড়ার সুযোগ নিয়ে আবার দৌরাত্ম্য বাড়লে অবৈধ সেবাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে পুনরাভিযানে নামে স্বাস্থ্য অধিদফতর। কিন্তু তা-ও ঝিমিয়ে পড়ে।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘অননুমোদিত, লাইসেন্স ছাড়া হাসপাতালগুলো চলতে দেওয়া যাবে না। বিষয়টি আমি এক দিনে পারব না। কিন্তু আমার বার্তা হচ্ছে- এ অননুমোদিত ক্লিনিক, হাসপাতাল বন্ধ করে দিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া হবে। অভিযান নিয়মিত রাখার জন্য আমি সার্বিক ব্যবস্থা নেব।’বাংলাদেশ প্রতিদিন
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com