কক্সবাজার:- মায়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্ঘাত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্য পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। গত কয়েক দিন সীমান্ত এলাকায় শোনায় গুলি ও মোটরশেলের শব্দ। সীমান্তের ওপারে দেখা যায় আগুনের ধোঁয়া। ওই সময় বাংলাদেশ সীমান্তঘেঁষা এলাকাগুলোতে মায়ানমারের হেলিকপ্টারকে টহল দিতে দেখা গেছে। বিশেষ করে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম, তুমব্রু, বাইশফাঁড়ি, কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যংয়ের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
আর এতেই কক্সবাজারের টেকনাফ এবং উখিয়া উপজেলার ৩৩ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত এখানে উসকানি হিসেবে কাজ করতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। তাদের দাবি, রাখাইনসহ আশেপাশের অঞ্চলের আরও চার লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ করে দিতে টেকনাফ এবং উখিয়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি করতে পারে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা এমন সব আশঙ্কা প্রকাশ করায় ক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্ত এলাকার মানুষ জানান, গত শুক্রবার বিকেল থেকে গতকাল সোমবার ভোর পর্যন্ত তুমব্রু সীমান্তে থেমে থেমে গুলি-গোলার শব্দ শুনতে পেয়েছেন তারা। এ ছাড়া তুমব্রু সীমান্তের ঘুমধুমের বাজার পাড়ায়, বাইশ ফাঁড়িসহ তুমব্রু রাইট এবং টেকনাফের হোয়াইক্যং ও শাহপরীর দ্বীপে নাফ নদীর ওপারে মায়ানমারের ভেতরে ভারী গুলির শব্দ শোনা যায়। এই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তারা।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, ‘সীমান্তের ওপারে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। বিশেষ করে সকাল-সন্ধ্যায় গুলির শব্দ পাওয়া যায়।
নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মায়ানমারে গোলাগুলির শব্দে এপারের সীমান্তে বসবাসকারীরা ভয়ভীতির মধ্য রয়েছেন।’
এদিকে উখিয়ার কতুপালং হয়ে টেকনাফের উনচিপ্রাং পর্যন্ত বিস্তৃত ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তায় নিয়োজিত আর্মড পুলিশের স্বতন্ত্র তিনটি ব্যাটেলিয়ন। একই সঙ্গে একাধিক আনসার ক্যাম্প। তবে সাম্প্রতিক উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে আর্মড পুলিশের পক্ষ থেকে চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি ক্যাম্পের অভ্যন্তরে টহলও দিচ্ছে তারা।
৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আমির জাফর বলেন, ‘আমাদের চেকপোস্ট যেকোনো রকম মুভমেন্ট কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। এখন পর্যন্ত আমরা কোনো প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করিনি।’
কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, নিয়মিত অপারেশনাল, প্রশিক্ষণ ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিদর্শনের পাশাপাশি মায়ানমারে চলমান সংঘর্ষের ঘটনায় সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য পরিদর্শনে আসেন বিজিবির মহাপরিচালক। সম্প্রতি মায়ানমারের অভ্যন্তরে দেশটির সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে লাগাতার সংঘর্ষে সীমান্তে বিজিবি সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পাশাপাশি পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন মহাপরিচালক। এ ছাড়া পালংখালী, তুমব্রু এবং হোয়াইক্যং বিওপি পরিদর্শন করে তাদেরও সতর্ক থাকার কথা জানান।
৩৩টি ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত মায়ানমারে সংঘাতের ফলে নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসার তথ্য তাদের কাছে নেয়।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার রাখাইনের একটি শহর নিজেদের দখলে নিয়ে নেয় আরাকান আর্মি। এরপর আশেপাশের গ্রামে তীব্র গোলাগুলি শুরু হয়, যা সংবাদমাধ্যম ইরাবতী সূত্রে জানা গেছে। ইরাবতী আরও জানায়, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) অ্যাম্বুলেন্সে করে আহত ৪১ রোহিঙ্গাকে মংডু হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। চিকিৎসা করার মতো অর্থও তাদের কাছে নেই। এরই মধ্যে হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে রাখাইনে মায়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিরোধের জের ধরে প্রাণ বাঁচাতে আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসে। অবশ্য এর আগেও বেশ কয়েকবার অনুপ্রবেশের মাধ্যমে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এসব মিলিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গার অবস্থানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ লাখের বেশি।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com