ডেস্ক রিরোট:- কয়রার ৬০০ মিটার বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ শেষ করার কথা পাঁচ মাস আগে, তবে এখনও তা পড়ে আছে অসমাপ্ত অবস্থায়কয়রার ৬০০ মিটার বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ শেষ করার কথা পাঁচ মাস আগে, তবে এখনও তা পড়ে আছে অসমাপ্ত অবস্থায়
খুলনার কয়রা উপজেলায় ৬০০ মিটার বেড়িবাঁধের তিনটি স্পটের প্যাকেজ মেরামতকাজ অসমাপ্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। ফলে ভাঙনের শঙ্কার পাশাপাশি জনদুর্ভোগ বাড়ছে। ৬০ লাখ টাকার কাজটি মাত্র ৭ লাখ ৭০ হাজার টাকায় স্থানীয় এক শ্রমিক সরদারের কাছে বিক্রি করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। পাঁচ মাস আগে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ৬০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়। এ অবস্থায় কাজ বন্ধ আছে।
এ ৬০০ মিটার বাঁধের কাজ শেষ হলে প্রায় পাঁচ হাজার লোকের চলাচলের পথ সহজ হবে। কিন্তু কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় জনভোগান্তি চরমে পৌছেছে। বাঁধে মাটির কাজ শেষ না হওয়ায় ৪ নম্বর কয়রার ২২০ মিটার সড়ক পাকাকরণ কাজ করতে পারছে না ইউনিয়ন পরিষদ।
কোথাও বাঁধের অর্ধেক স্থানে মাটি ফেলে রাখা হয়েছে। মঠবাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের উত্তর পাশে বাঁধের মাটি ধুয়ে চিকন হয়ে গেছে। ওই স্থান দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাচলও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ৪ নম্বর কয়রা লঞ্চঘাট এলাকায় বাঁধে মাটির কাজ শেষে সেখানে প্রায় ১০০ মিটার ধসে বাঁধ নিচু হয়ে পড়েছে। ধসে যাওয়া স্থানে এখনও মাটির কাজ করা হয়নি।
৪ নম্বর কয়রার বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, খরচ কমাতে বাঁধের ঢাল থেকে এসকেভেটর দিয়ে মাটি কেটে বাঁধ উঁচু করেছেন শ্রমিকরা। গ্রামবাসি বাধা দিলেও তা উপেক্ষা করেছেন তারা। যে কারণে দুই মাস না যেতেই নির্মাণকাজের মাটি ধসে পড়েছে। বাঁধের ঢালে বালুর বস্তা দেওয়ার কথা থাকলেও না দিয়েই চলে গেছে তারা।
পাউবো সাতক্ষীরা-২ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে কয়রা উপজেলার ১৩-১৪/২ নম্বর পোল্ডারের ৪ নম্বর কয়রা লঞ্চঘাটের দক্ষিণ পাশে ২২০ মিটার, একই এলাকার স্লুইস গেটের পাশে ২২০ মিটার এবং মঠবাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের পাশে ১৬০ মিটার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ মেরামত কাজের উদ্যোগ নেওয়া হয়। যশোর জেলার কেশবপুর এলাকার মেসার্স তানিয়া এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এ মেরামত কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। একটি প্যাকেজে তিনটি স্থানে মোট ৬০০ মিটার বাঁধে মাটি ভরাট ও ঢালে বালুর বস্তা প্লেসিং কাজে চুক্তিমূল্য ছিল প্রায় ৬০ লাখ টাকা। চলতি বছরের ৩০ জুন কাজের মেয়াদ শেষ হলে ঠিকাদারের আবেদনে ফের দুই মাস সময় বাড়িয়ে মেয়াদ ছিল গত ৩০ আগস্ট।
কাজটি ঠিকাদারের কাছ থেকে সাব কন্ট্রাক নেওয়া কয়রা উপজেলার দশহালিয়া গ্রামের শরিফুল ইসলাম জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তিনি ৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা চুক্তিতে ওই কাজের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কিন্তু কাছাকাছি মাটি না পাওয়ায় চুক্তি মূল্যে তার পক্ষে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি ঠিকাদারকে জানালে তিনি আরও এক লাখ টাকা বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু টাকা না দেওয়ায় কাজ শেষ করা যায়নি। এ মুহূর্তে কেশবপুর এলাকার নাছির উদ্দীন নামে এক ব্যক্তি ওই কাজের দায়িত্ব নিয়েছেন।
নাছির উদ্দীন বলেন, কাজটি স্থানীয় একজনকে সাব কন্ট্রাক্ট দেওয়া হয়েছিল। তিনি সময়মতো কাজ শেষ করতে না পারায় তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য লুৎফর রহমান বলেন, বাঁধে মাটির কাজ অসমাপ্ত থাকায় সেখানে ইটের সোলিংয়ের কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে ঠিকাদারকে বলা হলে তিনি মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে জানিয়ে কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাকে জানালে তিনি সব ঠিক করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু বছর শেষ হলেও অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করা হয়নি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তানিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক আব্দুল মতিন বলেন, কাজের ব্যাপারে সব কিছুই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানেন। এর বেশি কিছু বলার নেই।
পাউবো সাতক্ষীরা-২ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী সুমন আলী বলেন, কাজটি সাব কন্ট্রাক্ট দেওয়া হয়েছিল কিনা জানা নেই। তবে কাজের মূল ঠিকাদারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। তিনি অসমাপ্ত কাজ দ্রুত শেষ করতে চেয়েছেন।
পাউবো সাতক্ষীরা-২ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিকুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে জানা ছিল না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখে পরবর্তি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com