ডেস্ক রিরোট:- গণপদত্যাগ নিয়ে উত্তাল জাতীয় পার্টি (জাপা)। বৃহস্পতিবার একযোগে পদত্যাগ করেন দলটির ৬৭১ জন নেতাকর্মী। এই গণপদত্যাগের তালিকা এখানেই থেমে যাচ্ছে না। এ তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন আরও অনেকেই। শুধু তাই নয় জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের-মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুকে হটাতে চান তারা। দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদকে সামনে রেখে এগিয়ে যেতে চায় এই অংশটি। সেইসঙ্গে শিগগিরই নতুন কমিটি ঘোষণার জন্য সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। এদিকে চেয়ারম্যান জিএম কাদের পদত্যাগের সংখ্যা নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে বলে দাবি করেন।
চেয়ারম্যান-মহাসচিবের নানা ধরনের বিমাতাসুলভ আচরণে ক্ষুব্ধ তৃণমূল। নির্বাচনে ভরাডুবির জন্য দায়ী করা হচ্ছে তাদের। নেতারা প্রকাশ্যে করছেন সমালোচনা।
এরই প্রেক্ষিতে দলটি থেকে বহিষ্কার করা হয় দলের শীর্ষ চার নেতাকে। বহিষ্কার হওয়া নেতারা দল ভারী করার চেষ্টা করছেন। তাদের পরিকল্পনা দুটি। প্রথমত- রওশন এরশাদকে সামনে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। সেটি বিফল হলে নিজেরা সংগঠিত হয়ে তৃণমূল জাতীয় পার্টি গঠন করা।
সার্বিক কর্মকাণ্ডের নেতৃত্বে রয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক বহিষ্কৃত শফিকুল ইসলাম সেন্টু। দেশজুড়ে বিভিন্ন পর্যায়ের ছয়জন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। প্রয়োজনে পদত্যাগ করে জাতীয় পার্টির নতুন মোড়কে নাম লেখাবেন। অধিকাংশই চাইছেন নতুন দল না করে রওশন এরশাদের সঙ্গে এগিয়ে যেতে। অনেকেই চাইছেন নিজেদের সুসংগঠিত করে কাউন্সিলের মাধ্যমে শীর্ষ দুই পদে পরিবর্তন আনতে। তবে রওশন এরশাদের বয়সকেও বিবেচনায় আনছেন নেতারা।
রংপুর জেলার গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা নাম বলেন, ২৬টি আসনে আমরা সংসদে গিয়েছিলাম। এটাই আমরা কম মনে করতাম। এবার নির্বাচনকে বৈধতা দেয়ার জন্য আমাদের নির্বাচনে যাওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এখন জিএম কাদের কী করলেন? হাস্যকর একটা বিষয় করে দলকে ডুবিয়ে দিলেন। আমরা দলের নেতৃত্বের পরিবর্তন চাই। দলতো ধ্বংস করেছেনই এনারা থাকলে আরও হারিয়ে যাবে। চেয়ারম্যান-মহাসচিবের ওপর যে অনাস্থা আছে এটার বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়বো। দলকে টিকিয়ে রাখার জন্য বিভক্তি আমরা চাই না। আমাদের পরিকল্পনা দুটি। প্রথমত- রওশন এরশাদকে সামনে এনে এগিয়ে যাওয়া। আর এটি বিফল হলে নতুন করে ‘তৃণমূল জাতীয় পার্টি’ গঠন করা।
তিনি বলেন, আমাদের দলে এখন মহাবিপদ। জিএম কাদের রাজনীতি বোঝেন না। তিনি নিজের কিছু লোককে আপন করে নিয়েছেন তাদের কথা মতোই চলেন। আর তার স্ত্রী খুশি হলেই তিনি খুশি। আর মহাসচিবের নিজের ভাণ্ডো ভরলেই হলো। তিনি নিজের জন্য দলকে বেচেও দিতে পারেন। উদাহরণ তো আছেই তিনিই লাস্ট পেরেকটা ঠুকেছিলেন আওয়ামী সমর্থিত লিখে। এখন আমাদের দলকে বাঁচিয়ে রাখতে জিএম কাদের, মুজিবুল হক চুন্নুকে না সরালে টিকে রাখা যাবে না।
কিশোরগঞ্জ-৬ থেকে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করা নুরুল কাদের সোহেল বলেন, আমার পদত্যাগ নতুন করে করার কিছু নাই। আমি নির্বাচনের দিনই ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে পদত্যাগের বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছি। দল ভাঙলে ভালো কিছু বয়ে আনে না। আমরা চাই কাউন্সিলের মাধ্যমে দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ক্ষমতার পরিবর্তন। নতুন করে দল গঠন করা হলে হয়তো অন্যান্য দলের মতো এটাও হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। তিনি আরও বলেন, দলকে টিকিয়ে রাখার জন্য দলের শীর্ষ স্থানে পরিবর্তন জরুরি। জিএম কাদের জাতীয় পার্টিকে পৈতৃক সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছেন।
ঝালকাঠি জেলা জাতীয় পার্টির নির্বাহী সদস্য ইঞ্জিনিয়ার তসলিম উদ্দিন মুন্সী বলেন, দলের ভেতরে বিভক্তি দলের জন্য ভালো হয় না। এখন দলের মধ্যে দলাদলি না থাকাই ভালো। কাউন্সিলের মাধ্যমে যোগ্য নেতা নির্বাচন করাই ভালো হবে।
রওশন এরশাদকে নিয়ে নতুন করে এগিয়ে যেতে চাচ্ছেন মনঃক্ষুণ্ন নেতারা। আবার দলের সূত্রে জানা যায়, দু-একদিনের মধ্যেই একটি পকেট কমিটিও গঠন করা হতে পারে। পরিকল্পনা আছে বনানীর চেয়ারম্যানের কার্যালয় ঘেরাওয়েরও। ছাত্র সমাজের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক মৃধা মিরাজুল ইসলাম রাজ বলেন, অনেকেই পদত্যাগের পরিকল্পনা করছেন। শুক্রবার বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার ছাত্র সমাজের একটা অংশ পদত্যাগ করেছেন। আমরা রওশন এরশাদকে সামনে নিয়ে সেন্টু ভাইসহ একটা পরিকল্পনা নিয়ে আগানোর চেষ্টা করছি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুক্রবার বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার ছাত্র সমাজের আহ্বায়ক ইয়াসিন আরাফাত পদত্যাগ করেন। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তরের বহিষ্কৃত আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন, দুই/ একদিনের মধ্যেই আমরা আপডেট জানাবো। আমরা পদত্যাগ যারা করেছেন তাদের তথ্যসহ প্রকাশ করবো। আমরা নিজেদের সুসংগঠিত করছি। সামনে জাতীয় পার্টি সত্যিকার অর্থেই রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে উঠবে। চেয়ারম্যান-মহাসচিব তো রাজনীতি করেন না। তারা শুধু নিজেদের আখের গুছানো নিয়েই আছেন। আজ জাতীয় পার্টি নিয়ে মানুষ হাসাহাসি করে। তারা যদি সত্যিকার নেতা হতেন আমাদের কথা শুনতেন। আমাদের সঙ্গে বসতেন।
৬৭১ জন পদত্যাগ করেছেন এটি গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর তথ্যটি মিথ্যা বলে দাবি করেছিলেন জিএম কাদের। তিনি বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, ৬ শতাধিক নেতাকর্মী পদত্যাগ করেছেন মর্মে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে যেসব রিপোর্ট ছাপা হয়েছে প্রকৃত অর্থে এরমধ্যে পদ-পদবিধারী ২০-২৫ জনের বেশি নয়। বাকিরা ভাড়া করা, তারা দলের কেউ নন। মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে তাদের অর্থের বিনিময়ে জড়ো করা হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৃহস্পতিবারও আমার মতবিনিময় হয়েছে। এরমধ্যে কয়েকজন রংপুর যাচ্ছেন পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কবর জিয়ারতে। সঙ্গত কারণেই তাদের সঙ্গে রংপুরের নেতাকর্মীদের দেখা-সাক্ষাৎ হবে। জাপাকে নিয়ে গণমাধ্যমের কাছে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ আশা করে পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, যেকোনো রিপোর্ট প্রকাশের আগে ব্যাপক যাচাই-বাছাই’র মাধ্যমে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া জরুরি। অন্যথায় ব্যক্তি, সংগঠন, সমাজ তথা রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জিএম কাদেরের এই বক্তব্য প্রসঙ্গে শফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন, তাদের কিছু আছে যে বলবে। তারা শুধু মানুষের মধ্যে সন্দেহ ঢুকিয়ে দিতে পারেন। আর কিছু না। দল তো তাদের সঙ্গে নাই। তারা দলটাকে ধ্বংস করে ফেলেছে।মানবজমিনৃ
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com