ডেস্ক রিরোট:- আগাম ঘোষণা ছাড়াই প্রি-পেইড মিটার ভাড়া এক লাফে দ্বিগুণ বাড়িয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। এতোদিন কেজিডিসিএলের আওতাধীন গ্রাহকদের মিটার প্রতি মাসিক ভাড়া ছিল ১০০ টাকা। চলতি জানুয়ারি মাস থেকে গুণতে হচ্ছে ২০০ টাকা। ঊচ্চমূল্যস্ফীতির এ সময়ে মিটার ভাড়া বাড়ানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গ্রাহকেরা।
তবে কেজিডিসিএল কর্তৃপক্ষের দাবি- প্রি-পেইড মিটার ভাড়া দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত তাদের নিজেদের নয়। পেট্রোবাংলার অধীনে থাকা দেশের ৬টি গ্যাস বিপণন কোম্পানির মিটার ভাড়া একই করতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে। এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতেই দেশের অন্য ৫টি গ্যাস বিপণন কোম্পানির মতো মিটার ভাড়া ২০০ টাকা নির্ধারণ করেছে কেজিডিসিএল।
নগরীতে আবাসিক গ্যাস ব্যবহারীদের প্রি-পেইড মিটার সংযোগের জন্য ২০১৪ সালে পদক্ষেপ নেয় কেজিডিসিএল। এরই ধারাবাহিকতায় ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বর ‘ন্যাচারাল গ্যাস ইফিসিয়েন্সি প্রজেক্ট’ নামে ২২২ কোটি ৪৮ লাখ টাকায় ৬০ হাজার প্রি-পেইড মিটার সংযোজন প্রকল্প অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
নানা জটিলতা কাটিয়ে ২০১৯ সালের ৩০ জুন এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। ৬০ হাজার প্রিপেইড মিটার স্থাপনের এ প্রকল্পে সব মিলিয়ে ব্যয় হয় ১৪৯ কোটি টাকা। এর বাইরে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি থেকে নতুন করে ১ লাখ গ্রাহককে প্রি পেইড মিটারের আওতায় আনার কাজ শুরু হয়েছে। তবে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত লাগানো হয়েছে মাত্র ৯০০ মিটার।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রি-পেইড মিটারের জন্য একজন গ্রাহককে গ্যাস বিলের সঙ্গে মিটার ভাড়া হিসেবে মাসে ১০০ টাকা গুণতে হতো। সে হিসাবে মিটার ভাড়া বাবদ ৬০ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে কেজিডিসিএল পেত মোট ৬০ লাখ টাকা। এখন জানুয়ারি থেকে মিটার ভাড়া ২০০ টাকা করায় কেজিডিসিএল অতিরিক্ত আরো ৬০ লাখ টাকা পাবে।
আগাম বিজ্ঞপ্তি ছাড়া মিটার ভাড়া দ্বিগুণ করায় ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন গ্রাহকেরা। তাদের একজন পশ্চিম খুলশীর বাসিন্দা আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার রিচার্জ করতে গিয়ে দেখি মিটার ভাড়া ২০০ টাকা। কোনো আলোচনা ছাড়াই ১০০ টাকার মিটার ভাড়া রাতারাতি দ্বিগুণ হয়ে গেল। কর্মকর্তাদের জবাবদিহি থাকলে এমন হওয়ার কথা না।
নগরীর মিমি সুপার মার্কেট এলাকার বাসিন্দা জয়নব আক্তার জানান, তিন মাস ধরে গ্যাস সংকট চলছে। মানুষ রান্নার জন্য গ্যাস পাচ্ছে না। এসব সমস্যার সমাধান না করে উল্টো মিটার ভাড়া দ্বিগুণ করে দেওয়া হলো। ঊচ্চমূল্যস্ফীতির এ সময়ে ব্যয়ের বাড়তি বোঝা চাপিয়ে দেওয়ায় মানুষের কষ্ট বাড়বে। আশা করি- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের কষ্ট বুঝবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেজিডিসিএল’র নিয়ন্ত্রক সংস্থা পেট্রোবাংলার একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রি-পেইড মিটারের ভাড়া দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত কেজিডিসিএল কর্তৃপক্ষের নয়। কেজিডিসিএল কর্তৃপক্ষ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাই কেবল বাস্তবায়ন করছে। এতোদিন মিটার ভাড়া ১০০ টাকা নেওয়া হলেও চলতি জানুয়ারি মাস থেকে ২০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, জালালাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই মিটার ভাড়া ২০০ টাকা আদায় করতো। পেট্রোবাংলার একেক বিপণন কোম্পানি একেক রকম ভাড়া আদায় করায় সমস্যা হচ্ছিল। এজন্য মন্ত্রণালয় সব বিপণন কোম্পানির মিটার ভাড়া একই করার উদ্যোগ নিয়েছে। জানুয়ারি থেকে সব বিপণন কোম্পানির মিটার ভাড়া ২০০ টাকা করা হয়েছে।
পেট্রোবাংলার কর্মকর্তার এ যুক্তি মানতে নারাজ কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন। তিনি বলেন, গ্রাহককে না জানিয়ে ইচ্ছেমতো মিটার ভাড়া আদায় অযৌক্তিক। দাম বাড়ানোর কর্তৃত্ব বিইআরসি থেকে মন্ত্রণালয়ে নেয়ার কারণেই তারা এ কাজ করেছেন। সব বিপণন কোম্পানির মিটার ভাড়া ১০০ টাকা করেও সমন্বয় করা যেত। দাম দ্বিগুণ করতে হবে কেন?পূর্বকোণ
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com