রায়হান উদ্দিন:- শীতকাল ভ্রমণের মৌসুম। সাধারণত এ সময় সবাই ছুটে চলে নানান পর্যটন এলাকায়। বন্ধুরা মিলে ঠিক করেছিলাম খাগড়াছড়ির আলুটিলা যাওয়া হবে। সফরসঙ্গী ছয়জন। কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে ছুটে চলছে গাড়ি চট্টগ্রাম থেকে ১১২ কিলোমিটার দূরের খাগড়াছড়ির দিকে।
খাগড়াছড়ির শাপলা চত্বরে না গিয়ে আমরা নেমে পড়লাম আলুটিলার সামনে। এটি খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার মূল শহর থেকে ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে। প্রায় ৩ হাজার ফুট উঁচুতে আলুটিলা গুহা। রহস্যময় সুড়ঙ্গ নামেও এর খ্যাতি আছে। স্থানীয়রা আলুটিলা গুহাকে মাতাই হাকড় বা দেবতার গুহা বলে থাকে। খাগড়াছড়ি শহর থেকে ৮ কিলোমিটার আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে পৌঁছাতে হয় আলুটিলায়।
গুহাটি খুবই অন্ধকার ও শীতল। আমরা জনপ্রতি ৫০ টাকা করে টিকিট কেটে প্রবেশ করলাম গুহায়। চোখে পড়ল একটা সুন্দর বড় বটগাছ ও দৃষ্টিনন্দন গেট। প্রথমে বাম পাশের রাস্তা দিয়ে মিনিট কয়েক হাঁটলাম রহস্যময় গুহার সন্ধানে। দেখলাম, সবাই সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছে। আমরাও প্রায় ২৬৬টি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলাম। ঠিক নিচে বড় এক বটগাছ। সেখানেই গুহার প্রবেশমুখ। এখান থেকে সবাই মোটামুটি লাইন ধরে গুহায় প্রবেশ করছে। ১৭ থেকে ১৮ ফুট ব্যাসের গুহামুখ দিয়ে ভেতরে ঢুকে পুরো শরীর শীতল হয়ে উঠল।
গুহার ভেতরে সূর্যের আলো প্রবেশ করে না। তাই টর্চলাইট কিংবা মশাল নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। আমরা মোবাইল ফোনের লাইট জ্বালালাম। ভেতরের পথ কাদায় ভরা পিচ্ছিল। সঙ্গে আছে পাথর। একে পাথুরে গুহাই বলা যায়। একবার কোনোভাবে আছাড় খেলে সাংঘাতিকভাবে আহত হওয়ার আশঙ্কা আছে। আবার ওপর থেকে টিপ টিপ করে পানি পড়ছে। এই রাস্তায় খালি পায়ে যাওয়াটাই ভালো। হাঁটতে হাঁটতে এই পাথুরে গুহার অনেকটাই ভেতরে চলে গেলাম। অনেক গর্তে পানি জমে আছে। কিন্তু তাতে পা দেওয়া যাবে না, ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
গুহার মাঝামাঝি রাস্তা ভাগ হয়ে দুদিকে চলে গেছে। এর মধ্যে একটি বন্ধ। গুহার নিচ দিয়ে একটি ঝরনা বয়ে গেছে। ঝরনার পানি বেশ ঠান্ডা। আঁকাবাঁকা ও উঁচু-নিচু হওয়ায় অনেক সময় সামনের দিকে কিছুটা ঝুঁকে চলতে হয়।
প্রায় ১৫ মিনিট হাঁটার পর সূর্যের আলো চোখে পড়তে শুরু করল। জানা গেল, গুহাটির দৈর্ঘ্য ৮০ ফুট। গুহার শেষ পর্যায়ে উপস্থিত হয়ে বুঝতে পারলাম, কাদাপানি আর পাথরের বাধা পেরিয়ে গুহার শেষ প্রান্তে পৌঁছে মনের গহিনে বেশ খানিকটা আনন্দ হচ্ছে। আমাদের সবার মুখে হাসি। গুহা থেকে বেরিয়ে আবার ১৮৫টি সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে এলাম।
গুহার পাশাপাশি এখানে রয়েছে ১৮৪ ফুট দীর্ঘ একটি ঝুলন্ত সেতু। সেতুটির দুই দিকে দুটি কাচের ব্যালকনি আছে। সেখান থেকে পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখা যায়।
লোকমুখে শোনা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় খাগড়াছড়িতে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে এই এলাকার মানুষ পাহাড় থেকে বুনো আলু সংগ্রহ করে খেয়ে অনেক দিন পার করেছে। সে জন্য ধীরে ধীরে পাহাড়টি আলুটিলা নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
আলুটিলা দেখতে এসে চাইলে রিসাং ঝরনা, নিউজিল্যান্ড পাড়া, দেবতা পুকুর, হর্টিকালচার পার্ক ইত্যাদিও সহজে দেখা যায়। আমরা সন্ধ্যা ৬টায় রওনা দিলাম চট্টগ্রামের উদ্দেশে।
কীভাবে যাবেন
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বাসে ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি যাওয়া যায়। এসি বাসের ভাড়া ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। আর নন-এসি বাসের ভাড়া ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা জনপ্রতি। এ ছাড়া ট্রেনে চট্টগ্রাম গিয়ে শহরের অক্সিজেন মোড় থেকে বাস পাওয়া যায়। ভাড়া জনপ্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com