ডেস্ক রির্পোট:- চট্টগ্রাম নগরীতে টাটকা সবজির অন্যতম উৎস ছিল সাগরপাড়ের কৃষি জমি। বিষমুক্ত এবং কৃষি জমি থেকে সরাসরি তাজা সবজি হাতে পাওয়ার কারণে এসব পণ্যের চাহিদা ছিল বেশি। বিশেষ করে এখানকার শীতকালীন সবজির চাহিদা ছিল অত্যাধিক। কিন্তু পরিষ্কার পানির অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে সাগরপাড়ের সেই নিরাপদ সবজি। গত কয়েকবছর ধরে পানির অভাবে ঠিকমত চাষাবাদ করতে পারছেন না এখানকার কৃষকরা। বিভিন্ন খাল, উপখাল দখল হয়ে যাওয়া, অকার্যকর স্লুইস গেটসহ নানা কারণে বেড়েছে এই পানি সংকট। যে সব খালে এখনো কিছুটা প্রবাহ আছে সেসব খালে কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য মিশে পানি দূষিত হয়ে পড়ছে। বিভিন্ন কাজে কৃষকরা এসব কালো নোংরা পানি ব্যবহার করছেন। বিভিন্নস্থানে বিক্রির জন্য শাকসবজিও ধোয়া হচ্ছে এসব নোংরা পানিতে। ফলে এসব সবজি ক্রয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন ক্রেতারা। অন্যদিকে কলকারখানার বিষাক্ত ধাতব পদার্থ মিশ্রিত পানি ব্যবহারের ফলে উর্বরতা হারাচ্ছে কৃষি জমি।
একসময় নগরীতে পতেঙ্গা থেকে কাট্টলী পর্যন্ত উপকূলবর্তী এলাকা শাকসবজির ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত ছিল। জমি থেকে এসব তাজা সবজি সরাসরি কয়েকঘণ্টার মধ্যে ক্রেতার হাতে পৌঁছে যেত। পাশাপাশি বিষমুক্ত হওয়ার কারণে এই সবজি ক্রয়ে ক্রেতাদের আগ্রহও ছিল বেশি। কিন্তু অতিরিক্ত নগরায়নের প্রভাব পড়েছে এসব কৃষি জমিতে। টোল রোড ও আউটার রিং রোড নির্মাণের কারণে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে উঠায় গত কয়েক বছরে হারিয়ে গেছে অধিকাংশ কৃষি জমি। তারপরও বর্তমানে কয়েক শতাধিক কৃষক প্রায় ৫০ হেক্টরেরও বেশি জমিতে বিভিন্ন মৌসুমী সবজির চাষ করছেন। কিন্তু প্রায় সব কৃষকেরই চাষাবাদে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে পানি সমস্যা। পুরো এলাকাজুড়ে ছোট বড় অসংখ্য খাল, জলাশয়ে জমাট থাকা বৃষ্টির পানি দিয়ে তারা চাষাবাদ করতেন। কিন্তু বর্তমানে এর বেশিরভাগ ভরাট হয়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তিগতভাবে অপরিকল্পিত বাঁধ সৃষ্টি করে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে খালের পানি প্রবাহ।
হালিশহর চৌচালা এলাকার কৃষক জামাল বলেন, রিং রোডের পূর্বপাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খালের পানি দিয়ে এখানকার অর্ধশতাধিক কৃষক চাষাবাদ করেন। কিন্তু গত দেড়বছর আগে হঠাৎ করে খালে বাঁধ দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। রিং রোড থেকে সরাসরি ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে চলাচলের জন্য প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি বাঁধে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে। কোনভাবে স্লুইচ গেট দিয়ে জোয়ারের লবণাক্ত পানি খালে ঢুকে গেলে সে পানি বের হতে পারছে না। সে পানি ব্যবহার করলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জমি ও ফসল। তারপরও বাধ্য হয়ে এই খালের পানি দিয়ে এখানকার অর্ধশতাধিক কৃষক চাষাবাদ করেন। আমারা স্থানীয় কৃষি অফিস, ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে আবেদন করেও কোন প্রতিকার পাইনি।
উপকূলীয় এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ খালেই কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে পরিপূর্ণ। স্লুইস গেটগুলো কার্যকর না থাকায় খালে কোন পানি প্রবাহ নেই। দীর্ঘদিন এসব খালে বর্জ্য জমা হয়ে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে খালের এসব নোংরা পানিতে পাম্প লাগিয়ে জমিতে সেচ দেয়া হচ্ছে। আবার সে পানি জমিয়ে রেখে ধোয়া হচ্ছে বিভিন্ন সবজি।
কাট্টলী এলাকার কৃষক ইলিয়াছ বলেন, আমরা জমি থেকে এসব সবজি সরাসরি বিক্রি করে থাকি। এলাকার অনেক পুকুর এখন ভরাট হয়ে গেছে। অনেক কৃষকেরই পরিষ্কার পানিতে এসব সবজি ধোয়ার ব্যবস্থা নেই। এছাড়া পাইকারি বিক্রেতারা জমি থেকে নেয়া এসব সবজিতে এসব নোংরা পানি ব্যবহার করে। ফলে স্থানীয়রা এখন এসব সবজি কিনতে চান না।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন কৃষি অফিসের উপ সহকারী কৃষি অফিসার সুভাষ চন্দ্র দত্ত বলেন, প্রাকৃতিক পানির তীব্র সংকটে ভুগছে উপকূলের কৃষকরা। বিভিন্ন শিল্প কারখানার বর্জ্য এসে মিশছে উপকূলীয় বিভিন্ন খালে। ভালো পানির অভাবে বিষাক্ত ধাতব মিশ্রিত এসব পানি ব্যবহার করছেন কৃষকরা। ফলে এখন অনিরাপদ হয়ে পড়েছে এসব সবজি।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্লুইস গেটগুলো অচল। বিভিন্ন সময়ে জোয়ারের লবণাক্ত পানি ঢুকে যাচ্ছে জমিতে। এসব পানি ব্যবহারেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। তবে সরকারি উদ্যোগে ডিপ টিউবওয়েল ব্যবহার করে পানি সেচের ব্যবস্থা করা গেলে এখানকার কৃষকরা আবারও নিরাপদ সবজি উৎপাদন করতে পারবেন।পূর্বকোণ
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com