ডেস্ক রির্পোট:- বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘একতরফা’ আখ্যা দিয়ে তা বাতিলে রাজপথে আন্দোলনের পাশাপাশি দেশবাসীকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট বর্জনের আহ্বান অব্যাহত রেখেছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে ভোটারদের ভোটদানে নিরুৎসাহিত করতে দুই সপ্তাহ ধরে গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণসহ নানাভাবে প্রচার চালিয়েছে দলটি। বিএনপি মনে করছে, এতে জনগণ ব্যাপকভাবে সাড়া দিয়েছে। ক্ষমতাসীনরা জোরজবরদস্তি করলেও শুধু আওয়ামী লীগের পদধারী নেতারা ছাড়া অন্যদের ভোটকেন্দ্রে আনতে পারবে না। কারণ, এই ‘একতরফা’ ভোট নিয়ে মানুষের কোনো আগ্রহ-উৎসাহ নেই। এবার কোন প্রক্রিয়ায়, কী ধরনের নির্বাচন হচ্ছে, জনগণের কাছে তা এরই মধ্যে স্পষ্ট। তাই ভোটের দিন (আজ রোববার) বিএনপির নেতাকর্মীরা যথাসম্ভব গ্রেপ্তার এবং সংঘাত-সংঘর্ষ এড়িয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট বর্জনে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করবেন। পাশাপাশি সরকারি চাপে দলের কেউ যাতে ভোট দিতে না যায়, সেটিও নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে তৃণমূলের দায়িত্বশীল নেতাদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে দলটি।
দেশবাসীকে ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, এই একদলীয় সরকারের সময় ফুরিয়ে এসেছে। গণতন্ত্রকামী মানুষের প্রতি আমাদের আহ্বান, আপনারা এই জনপ্রতিনিধিত্ববিহীন সরকারের কোনো হুমকি-ধমকি অথবা তাদের কোনো ভয়ভীতিতে চিন্তিত হবেন না। সাহসিকতার সঙ্গে ভোট বর্জন করুন।
দলটির কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, বিএনপি এই একতরফা, ডামি, ভাগবাটোয়ারার নির্বাচন বয়কট করেছে। দলের পক্ষ থেকে ভোটারদেরও এ নির্বাচনী তামাশা বর্জনের আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে মানুষকে ভোটদানে নিরুৎসাহিত করতে গত ২০ ডিসেম্বর থেকে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ, মিছিল, পথসভা, উঠান বৈঠক, কোথাও কোথাও মাইকিং, বক্তব্য-বিবৃতি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে ডামি গানসহ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নানাভাবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচন ঘিরে সরকার কী ধরনের নীলনকশা শুরু করেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তা দেশবাসীর কাছে তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস, এসবের মধ্য দিয়ে সরকারের নীলনকশা এবং একতরফা ভোট বর্জনের আহ্বান দেশের ১৮ কোটি মানুষের কাছে আমরা তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণকে ভোট ও কেন্দ্রবিমুখ করতে আমাদের এই প্রচার অব্যাহত থাকবে।
জানা গেছে, ভোট বর্জন করলেও ভোটের দিন নির্বাচনের পরিবেশ, ভোটার উপস্থিতি ও ভোট ঘিরে সম্ভাব্য সহিংসতার ঘটনাসহ নির্বাচনের সার্বিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবে বিএনপি। এ লক্ষ্যে দলটির দপ্তরের তত্ত্বাবধানে এরই মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, নির্বাচন ঘিরে এরই মধ্যে একাধিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। তাদের আশঙ্কা, ভোটের দিন সহিংসতা আরও বাড়তে পারে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যেই মূলত এ সহিংসতা হতে পারে। কারণ, নৌকার পাশাপাশি স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থীও আওয়ামী লীগের। ভোটে জিততে কেউ কাউকে ছাড় দিতে চাইবে না।
বিএনপি নেতাদের মতে, বিদেশি চাপে নির্বাচন উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক দেখাতে দলীয় ডামি প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। অন্য ছোট দলগুলোকে ভোটে দাঁড় করিয়েছে। ভোটের দিনও সেটা প্রমাণ করতে চান তারা। সেজন্য সারাদিনই ভোটকেন্দ্রে জটলা সৃষ্টি করা হতে পারে। আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা পেতে নির্বাচনের পর ভোটার উপস্থিতির সংখ্যাও বড় করে দেখাবে। এটা আওয়ামী লীগের পুরোনো কৌশল।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এক বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা এরই মধ্যে বলেছেন, নির্বাচনে ৭০ শতাংশ ভোট দেখাবে সরকার। তাই সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক ও প্রশাসনিক যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে ভোটের প্রকৃত চিত্র সংগ্রহের চেষ্টা করবে বিএনপি। দলটি মনে করছে, সরকার ও সরকারি দল ব্যাপক জোরজবরদস্তি না করলে এ নির্বাচনে ৫ শতাংশের কম ভোট পড়বে।
জানা গেছে, দিনব্যাপী মনিটরিং শেষে ভোটের সার্বিক চিত্র নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে ব্রিফিং করা হবে। এ ছাড়া তথ্য-প্রমাণসহ সংগৃহীত উপাত্ত দ্রুততম সময়ে ঢাকার বিভিন্ন দূতাবাসের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও বিদেশি সংস্থার কাছেও তুলে ধরবে দলটি। তাদের মতে, জনগণ ভোট বর্জন করলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আর এমন নির্বাচন এবার পশ্চিমাসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। কারণ, পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে একটি অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলে আসছে। এর অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে ভিসা নীতি কার্যকর করেছে। তাই সরকার নির্বাচন করে ফেললেও দ্রুততম সময়ের মধ্যে পশ্চিমা বিশ্ব থেকে নানামুখী পদক্ষেপ আসতে পারে। এতে ক্ষমতাসীনরা ব্যাপক চাপের মুখে পড়বে। তাই নির্বাচনের পর আন্দোলন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশের ইতিহাসে ৭ জানুয়ারি আরও একটি একতরফা পাতানো নির্বাচনের সবচেয়ে অন্ধকারময়-তিমিরাচ্ছন্ন অধ্যায় রচিত হতে যাচ্ছে। অভিনব মডেলের ডামি নির্বাচনী নাটকের মাধ্যমে আবারও ক্ষমতায় থাকতে এক বিপজ্জনক খেলার আয়োজন হয়েছে। শুধু দেশের মানুষ নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে গণতান্ত্রিক বিশ্বকে উপেক্ষা করে অনুষ্ঠিতব্য এ ভোটরঙ্গ বাংলাদেশকে নিয়ে যাচ্ছে ভয়ংকর বিপদের অতলে। এরই মধ্যে এ তামাশার নির্বাচন বিশ্বব্যাপী প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
যুগপৎ আন্দোলনের শরিক গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের নামে তামাশা মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে। সরকার জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের সংলাপ-সমঝোতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এই নির্বাচনী তামাশার মধ্য দিয়ে দেশকে নিষেধাজ্ঞার দিকে নিয়ে গিয়েছে। নির্বাচন কমিশন ও যেসব সরকারি কর্মকর্তা এ একতরফা নির্বাচনের আয়োজন করছেন—এটি বন্ধ না করলে নির্বাচনের পরে তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। নতুন সরকারের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও আসতে পারে।
আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপির ডাকে দেশব্যাপী চলমান ৪৮ ঘণ্টার হরতাল আজ রোববার ভোটের দিনও অব্যাহত থাকবে। মূলত ‘একতরফা’ নির্বাচন বর্জনের আহ্বানে ডাকা এ হরতাল ঘিরে ভোটের দিন কোনো ধরনের সংঘাত-সংঘর্ষে না জড়াতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের এরই মধ্যে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে চলমান এ হরতালের সময়সীমা আরও বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে ‘একতরফা’ নির্বাচনের ফল বাতিলের দাবিতে ভোটের পরের দিনও হরতালের ডাক দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া ভোটের দিনের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় হরতালের মেয়াদ আরও এক দিন বাড়তে পারে। এরপর আন্দোলনের অংশ হিসেবে সমাবেশ, বিক্ষোভের মতো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে বিএনপি ও যুগপতের শরিকরা। ন্যূনতম দেড় থেকে দুই মাস কর্মসূচি চালিয়ে যেতে চান তারা।
এদিকে নির্বাচনের নামে প্রহসনের প্রতিবাদে গণতন্ত্র মঞ্চ আজ সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ-সমাবেশ করবে। এ তথ্য জানিয়ে মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক কালবেলাকে বলেন, বিএনপিসহ গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে আমরা দেশবাসীকে ডামি নির্বাচন প্রত্যাখ্যান-বর্জন করার আহ্বান জানিয়েছি। ভোটারদের প্রতি আমাদের আহ্বান, নির্বাচনের দিন আপনারা বাসায় থাকবেন, ব্যক্তিগত কাজ করবেন, পরিবারকে সময় দেবেন। সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব হিসেবে আপনি যেমন ভোটদানে বিরত থাকবেন, তেমনি আপনার পরিচিত আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবসহ অন্যরাও যাতে এই নির্বাচনী তামাশায় অংশগ্রহণ না করে, সেই উদ্যোগ নেবেন। তাদের ভোটদানে নিরুৎসাহিত করবেন। শোনা যাচ্ছে, নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে ভয়ভীতি দেখানোর পাশাপাশি টাকা দিয়ে ভোট কেনা হচ্ছে। আমাদের আহ্বান, কেউ টাকার কাছে ভোট বিক্রি করবেন না। কারণ, এটা আত্মা বিক্রি করার সমতুল্য।কালবেলা
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com