ডেস্ক রির্পোট:- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাঠ থেকে সরছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থীরা। আর্থিক ও পারিবারিক কারণ, নির্বাচনের পরিবেশ, দলের সহায়তা না থাকাসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে এরই মধ্যে নয়জন প্রার্থী সরে দাঁড়িয়েছেন। আরও কয়েকজন সরে দাঁড়ানোর আভাস দিয়েছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ছাড় পাওয়া ২৬টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে পরাজয়ের শঙ্কায় রয়েছেন জাপার প্রার্থীরা। এই অবস্থায় দলটির তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে নির্বাচন বর্জনের দাবি জোরালো হচ্ছে। প্রত্যাশিত আসন না পেলে কেন্দ্রীয় নেতারাও এমন অবস্থান নিতে পারেন বলে দলটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
অবশ্য জাপার চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের) বলেছেন, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো প্রার্থীর স্বাধীনতা। সরে দাঁড়ানোর কারণ হিসেবে তিনি হুমকি এবং অর্থের অভাবকে দায়ী করেন। তিনি শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করে দেখার কথা জানান।
জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে জাপা ২৬৫টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। এগুলোর মধ্যে ২৬টি আসনে ছাড় দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ওই আসনগুলোর বাইরে থাকা অন্য আসনগুলোর জাপার প্রার্থীদের মধ্যে ৯ জন গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন গাজীপুর-৪ আসনের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সামসুদ্দিন খান এবং সুনামগঞ্জ-১ আসনের আব্দুল মান্নান তালুকদার। সামসুদ্দিন খান কাপাসিয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে শারীরিক, পারিবারিক ও আর্থিক সংকটের কারণে সরে দাঁড়ানোর কথা জানান। গত রোববার গাজীপুর-১ ও ৫ আসনে জাপার প্রার্থী সাবেক সচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। এদিকে সংবাদ সম্মেলন করে রাঙ্গামাটি আসন থেকেও জাপার প্রার্থী হারুন মাতবর ও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
আব্দুল মান্নান তালুকদার গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে প্রচারে দলের কোনো সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে সরে দাঁড়ানোর কথা জানান। বলেন, ‘আসন ভাগাভাগি করেই নির্বাচন হবে। তাই আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালাম।’ এই আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) প্রার্থী দেওয়ান শামছুল আবেদীন গতকাল সরে দাঁড়ান নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকার অভিযোগে।
হবিগঞ্জ-২ আসনে জাপার প্রার্থী শংকর পাল সোমবার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। তিনি নেতা-কর্মীদের কথা চিন্তা করে এ সিদ্ধান্ত নেন বলে জানান গণমাধ্যমকে।
রোববার বরিশালে সংবাদ সম্মেলন করে সরে দাঁড়ান বরিশাল-২ ও ৫ আসনে জাপার প্রার্থী ও দলের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস এবং বরগুনা-১ আসনের প্রার্থী খলিলুর রহমান। ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, ‘সবকিছু মিলিয়ে আমার কাছে মনে হচ্ছে, ৭ জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।’ খলিলুর রহমান বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।
২৪ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে জাপার প্রার্থী মো. শাহানুল করিম স্বতন্ত্র এক প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে সরে দাঁড়ান। ২২ ডিসেম্বর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের জাপা প্রার্থী জাকির হোসেন এবং নাটোর-৪ আসনের প্রার্থী ও জেলা জাপার সভাপতি আলাউদ্দিন মৃধা। তিনি মনোনয়ন-বাণিজ্যের অভিযোগ আনেন।
এদিকে খুলনা অঞ্চলের কয়েকটি আসনের প্রার্থীও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর আভাস দিয়েছেন। তাঁদের একজন খুলনা-৬ আসনের প্রার্থী ও দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম মধু বলেন, ‘ভোটের মাঠে থাকার পরিবেশ নেই। মাঠে থাকব কি থাকব না, আমরা আজ-কালের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেব।’
রাজশাহী-৫ আসনের জাপা প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মো. আবুল হোসেন বলেন, স্থানীয় নেতা-কর্মীরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পক্ষে। তবে কেন্দ্র থেকে সরে না দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত আছে। তবে নির্বাচনটা প্রতিকূল হচ্ছে। রাজশাহী-১ আসনে জাপা প্রার্থী মো. শামশুদ্দিন জানান, সরে দাঁড়াতে কেন্দ্রের ওপর তৃণমূলের চাপ বেড়েছে।
দল থেকে কোনো সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ করে যশোর-২ আসনের জাপা প্রার্থী ফিরোজ শাহ বলেন, ‘যশোরের অনেকেই বলছেন, বর্জনের কথা। আমরা আরও দুই-তিন দিন দেখব। চেয়ারম্যান-মহাসচিব বসবেন বলছেন। দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিলে অনেক প্রার্থী সরে যাবেন।’ নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট নন বলে জানান যশোর-১ আসনে জাপা প্রার্থী আক্তারুজ্জামান।
পরিবেশ সুষ্ঠু না থাকলে সরে দাঁড়ানোর কথা জানান সিলেট-৫ আসনের জাপা প্রার্থী শাব্বীর আহমদ।
জাপা সূত্র বলছে, দলটির অধিকাংশ প্রার্থী আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও প্রচারের মাঠ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। কেউ কেউ মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত হিসাব-নিকাশ ঠিক না থাকলে কেন্দ্র থেকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা আসতে পারে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের প্রার্থী আব্দুর রশিদ বলেন, প্রচার চালাচ্ছেন। দল বর্জন করতে বললে করবেন।
জাপার একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, দলের মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা এমনিতেই নির্বাচনবিমুখ। সমঝোতায় ২৬টি আসন পাওয়ায় অনেক প্রার্থী ও নেতা-কর্মীরা হতাশ। এর ওপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, রংপুর-১, নীলফামারী-৩ ও ৪, গাইবান্ধা-২ আসনসহ ছাড় পাওয়া অর্ধেক আসনেই দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের শঙ্কা করা হচ্ছে। দলের চেয়ারম্যানসহ সাত প্রার্থীর জয় নিশ্চিত হলেও চ্যালেঞ্জে পড়তে হয়েছে চেয়ারম্যানের স্ত্রী শেরীফা কাদের, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ প্রথম সারির কয়েকজন নেতাকে।
জাপার প্রার্থীদের সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে দলের কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার জানা নেই। আমি ব্যক্তিগত কাজে নির্বাচন পর্যন্ত ঢাকার বাইরে আছি।’
জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত অনেক দলীয় প্রার্থী নির্বাচনে থাকেন না। কেউ ঘোষণা দেন, কেউ এমনি বসে যান। তবে আমার একটা নির্দেশ আছে, যাঁরা নির্বাচন করতে চান, করতে পারেন। নির্বাচন করতে না চাইলে সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা রয়েছে।’ শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন না আসা পর্যন্ত এটা বলা যাচ্ছে না। আমাদের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করে দেখতে হবে।’
জাপা প্রার্থীদের সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শামসুল আলম বলেন, জাতীয় পার্টি ক্ষমতার লোভ ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য হয়েছে। দলটি এরশাদের সময় থেকেই একটা সুবিধাবাদী রাজনৈতিক ধারায় ছিল, এবারও তারা তা-ই করেছে।’আজকের পত্রিকা
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com