ঢাকা: জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাতটি অনুবিভাগের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরটি হলো নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগ (এপিডি)। কিন্তু এই অনুবিভাগের প্রধানের পদটি দুই মাস আগে শূন্য হলেও এখন পর্যন্ত কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এতে ঝুলে আছে একটি ব্যাচের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি। বিষয়টিকে প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা হিসেবেই দেখছেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা।
চলতি মাসের মাঝামাঝিতে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল হতে পারে। তার আগেই বিসিএস ২৯তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ার কথা। এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি দুই সপ্তাহ আগেই শেষ হয়েছে। কিন্তু অজানা কারণে প্রজ্ঞাপন জারি হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কেউ কেউ মনে করছেন, এপিডি অনুবিভাগের প্রধান পদে নিয়োগ নিয়ে জটিলতার কারণেই ঝুলে আছে ব্যাচটির পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, এপিডি নিয়োগ নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ দুই কর্তাব্যক্তির মধ্যে মতভিন্নতা আছে। একজন চান তাঁর এলাকার এক কর্মকর্তাকে ওই পদে নিয়োগ দিতে, যিনি বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়েই কর্মরত। অন্যজন চান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বাইরে অন্য দপ্তরে কর্মরত আরেকজনকে এপিডি প্রধান করতে। এ কারণে ঝুলে আছে এপিডি নিয়োগের বিষয়টি।
জানা যায়, এপিডি অনুবিভাগের প্রধান হিসেবে এক বছরের বেশি দায়িত্ব পালন করেছেন ত্রয়োদশ বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তা আবদুস সবুর মন্ডল। গত ৫ সেপ্টেম্বর তাঁকে পদোন্নতি দিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই মন্ত্রণালয়ে তাঁর যোগ দেওয়া হয়নি। গত ১৪ সেপ্টেম্বর তাঁর জায়গায় জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আলী হোসেনকে পদোন্নতি দিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই প্রজ্ঞাপনে আব্দুস সবুর মন্ডলের পদায়নসংক্রান্ত আগের আদেশটি বাতিল করে তাঁকে আগের পদে অর্থাৎ এপিডির প্রধান হিসেবে সংযুক্ত থেকে দায়িত্ব পালনের আদেশ জারি করা হয়। অবশেষে গত ২৬ অক্টোবর তাঁকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব পদমর্যাদায়) পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর পর থেকেই এপিডিপ্রধানের পদটি শূন্য। গত ১১ দিনের পদটিতে এখনো কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি, যা নজিরবিহীন। বর্তমানে পদটিতে চলতি দায়িত্বে আছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) নবীরুল ইসলাম।
বিদায়ী এপিডিপ্রধান সবুর মন্ডলের সচিব হওয়ার আগেই কে এই পদে আসছেন, তা নিয়ে আলোচনা-গুঞ্জন ছিল প্রশাসনে। এ পদের জন্য এখন পর্যন্ত ১৫তম ব্যাচের কয়েকজন অতিরিক্ত সচিবের নাম আলোচনায় আছে। তাঁদের মধ্যে রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মহিদুল ইসলামের নামই বেশি শোনা যাচ্ছে। তাঁদের দুজনের মধ্যে যে কোনো একজনকে এপিডির প্রধান হিসেবে দেখা যেতে পারে। এর বাইরে বিসিএস ১৭তম ব্যাচের এপিডি উইংয়ে কর্মরত অতিরিক্ত সচিব সায়লা ফারজানার নামও শোনা যাচ্ছে। তবে এপিডির দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে অতীতে কখনো এক ব্যাচ ডিঙিয়ে পদায়ন করা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও প্রশাসনবিষয়ক বহু গ্রন্থপ্রণেতা ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. ফিরোজ মিয়া বলেন, এটি প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা। পদোন্নতির জিও দেরি হতেই পারে। কিন্তু দুই মাস ধরে এত কিছু ঘটার পরও এখনো এপিডি নিয়োগ হয়নি। প্রশাসনের ‘চেইন অব কমান্ড’ ভেঙে পড়েছে; যার কারণে ভবিষ্যতে প্রশাসনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ফলে জনসেবা ব্যাহত হবে।
তবে প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলার অভিযোগ মানতে নারাজ জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘প্রশাসনে কোনো ধরনের সমন্বয়হীনতা নেই। প্রশাসন নিয়মমাফিক চলছে। উপসচিব পদে পদোন্নতির সব কার্যক্রম শেষ। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলেই পদোন্নতির জিও হবে। আর এখনো এপিডি নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। এতে কোনো অসুবিধাও হচ্ছে না। এর আগের এপিডিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব করা হলেও তা বাতিল করে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ফলে ধীরে বুঝেশুনে নিয়োগ দেওয়া হলে কোনো ধরনের ভুল হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।’
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com