আন্তর্জাতিক ডেস্ক :-তুরস্ক ও সিরিয়ায় স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ২৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত ২৪ হাজার ৪৫৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
তুরস্কের ধ্বংসস্তূপ থেকে বের হচ্ছে লাশের গন্ধ।
তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা বিভাগ জানিয়েছে, তাদের দেশে ভূমিকম্পের ঘটনায় নিহত ২০ হাজার ৬৬৫ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন ৮০ হাজারের বেশি মানুষ।
দেশটির কাহরামানমারস প্রদেশে ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। সেখান থেকে বিশ্ববাসীকে সর্বশেষ তথ্য জানাচ্ছেন আল জাজিরার প্রতিবেদক রেসুল সেরদার। তিনি জানিয়েছেন, উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে আহত-নিহত অনেক মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। দিন যত যাচ্ছে, পরিস্থিতি ভয়ানক হয়ে উঠছে। চারদিকে এখন লাশের গন্ধ। এখনও বহু মানুষ নিখোঁজ। পাঁচ দিন গড়িয়েছে, সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। এখন যদি কাউকে জীবিত উদ্ধার করা হয়, সেটি অলৌকিক ঘটনা ছাড়া আর কিছু হতে পারে না।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ৬৭ জনকে ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধার করেছে উদ্ধারকারী। ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল জুড়ে ৩১ হাজার উদ্ধারকারী কাজ করছেন। তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতে সাংবাদিকদের বলেছেন, দেশের প্রায় ১০ লাখ ৫০ হাজার মানুষ ভূমিকম্পের কারণে গৃহহীন হয়ে পড়েছে। তাদের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
সিরিয়ায় বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তর ও উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকা ও সরকার নিয়ন্ত্রিত অংশগুলোয় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩ হাজার ৫১৩ জনে দাঁড়িয়েছে। সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকায় মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ৩৪৭ বলে জানা গেছে।
দেশটির বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে বেসামরিক উদ্ধারকারী দল হোয়াইট হেলমেটস। সংস্থাটি জানিয়েছে, এ এলাকায় ভূমিকম্পের নিহত হয়েছে ২ হাজার ১৬৬ জন।
গতকাল শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) এক ঘোষণায় হোয়াইট হেলমেটস জানিয়েছে, তারা উত্তর ও উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোয় টানা ১০৮ ঘণ্টা তল্লাশি ও উদ্ধারকাজ চালিয়েছে। সেখানে আর কোনো মৃত মানুষ নেই- এমনটিই বিশ্বাস করছেন তারা।
তুর্কি কর্তৃপক্ষ ও সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের মতে, দুই দেশে এখনও কয়েক হাজার মানুষ নিখোঁজ আছেন। তাদের উদ্ধারে তল্লাশি ও উদ্ধার তৎপরতা চালু রাখবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এ অবস্থায় প্রায় ১০০টি দেশ তুরস্ককে সহায়তা দিচ্ছে বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ভূমিকম্পের ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য নিরানব্বইটি দেশ থেকে তারা প্রস্তাব পেয়েছেন। ৬৮ দেশ থেকে অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দলের ৮ হাজার ৩২৬ জন কর্মী দেশটিতে নিজেদের কার্যক্রম চালু রেখেছে।
তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানিয়েছে, দক্ষিণ তুরস্কের দশটি প্রদেশে ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়াদের জন্য মানবিক সহায়তা দিতে আর্মেনিয়ার সঙ্গে একটি সীমান্ত ক্রসিং খুলে দেওয়া হয়েছে। এরপর মানবিক সহায়তাবাহী পাঁচটি ট্রাক ইগদির প্রদেশের অ্যালিকান সীমান্ত অতিক্রম করে। ক্রসিংটি শেষবার ১৯৮৮ সালে ব্যবহার করা হয়েছিল। সেবার তুর্কি রেড ক্রিসেন্ট আর্মেনিয়ায় একটি ভূমিকম্পের পরে সহায়তা দিয়েছিল।
তুর্কি-আর্মেনিয়ান আইন প্রণেতা গারো পাইলান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। পরে এক টুইট পোস্টে তিনি বলেন, আসুন এই মহা বিপর্যয়ে কিছু ভালো করি। সংহতি জীবন বাঁচায়!
তুরস্কের ক্ষতি বিচারে ভালো নেই সিরিয়াও। দেশটির ৫০ লাখ মানুষ ভূমিকম্পের কারণে গৃহহীন হতে পারে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। সংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) সিরিয়া প্রতিনিধি শিভাঙ্ক ধানপালা গতকাল শুক্রবার বলেছেন, ভূমিকম্পের কারণে সিরিয়ায় প্রায় ৫৩ লাখ মিলিয়ন মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। সংখ্যাটা অনেক। ইতোমধ্যে বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে।
ভূমিকম্পের পর আক্রান্ত এলাকার কিছু ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করা রয়েছে। আঙ্কারা থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক সিনেম কোসেওগ্লু জানিয়েছেন, কয়েকজন আইনজীবী ভবনগুলোর ঠিকাদার ও পরিদর্শন সংস্থা এবং অন্যান্যদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক অভিযোগ দায়ের করেছেন। ভবন ধ্বসে পড়ার দায়ে তাদের অভিযুক্ত করা হচ্ছে।
শুক্রবার ওসমানিয়ে প্রদেশের ওসমানিয়ে শহরে যে দশটি ভবন কঠিন ক্ষতির শিকার হয়, সেগুলোর ৪ ঠিকাদারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে পুলিশ দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে, যারা হাতায়ে একটি কম্পাউন্ড নির্মাণ করছিলেন। কম্পাউন্ডে আড়াইশটি ফ্ল্যাট ছিল। পুরো কম্পাউন্ড ধ্বসে পড়েছে।
কোসেওগ্লু বলেন, ওই দুই ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেফতার করে তখন, যখন তারা বেশ অর্থ নিয়ে তুরস্ক ত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। হয়ত তারা পালাতে চেষ্টা করছিলেন।সূত্র: আল জাজিরা
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com