ডেস্ক রির্পোট:- দেশে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু এ রোগের বিষয়ে জনসচেতনার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের তেমন একটা প্রচার প্রচারণা নেই বললেই চলে। ফলে জনসাধারণকে খেজুরের রস পান থেকে কোনোভাবেই বিরত রাখা যাচ্ছে না। নিপাহ ভাইরাস সর্ম্পকে আমজনতার কোনো ধারণা নেই। যে ভাইরাসে আক্রান্ত হলে অধিকাংশ মানুষেরই মৃত্যু ঘটে।
নাটোরের হাট বাজার এবং সড়ক-মহাসড়কে খেজুরের রস ক্রয়, বিক্রয় এবং পান করার হিড়িক পড়েছে। জেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে নিপাহ ভাইরাসের বিষয়ে তেমন কোনো দৃশ্যমান সতর্কতামূলক প্রচার-প্রচারণা নেই। ভয়াবহ এ ভাইরাসের খবর জানেন না গাছিরা। জানা নেই সাধারণ মানুষেরও।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যনুযায়ী, নিপাহ ভাইরাস এখন পর্যন্ত দেশের ২৮ জেলায় ছড়িয়ে পড়ার খবর জানানো হয়েছে। কিন্তু অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক তথ্য বলছে, নিপাহ ভাইরাস দেশের অন্তত ৩২ জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। নিপাহ ভাইরাসে চলতি বছরে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১২ জন। তাদের মধ্যে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। এ ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুহার ৮০ শতাংশ। তাই নিপাহ ভাইরাসের ঝুঁকি থাকার পরও বন্ধ হয়নি খেজুরের রস পান।
গত ৩০ জানুয়ারি রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার করমদোশী গ্রামের শিশু সিয়াম হোসেন। পরীক্ষার পর জানা যায়, সিয়ামের মৃত্যু হয়েছে নিপাহ ভাইরাসে। এ ঘটনার পর আইইডিসিআরের ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল বাগাতিপাড়ায় খেজুরের রস খাওয়া ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহ করে। কিন্তু তারপরও নিপাহ ভাইরাসের ঝুঁকিতে থাকা নাটোরের জনসাধারণের মধ্যে কমছে না কাঁচা রস খাওয়ার প্রবণতা। গত সপ্তাহে রাজশাহীর একজন নারী নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ৩৫ বছর বয়সী ওই নারী আক্রান্ত হওয়ার আগে খেজুরের রস খেয়েছিলেন। বাদুড় নিপাহ ভাইরাসের বাহক। খেজুরের রসে এ ভাইরাস এসেছিল বাদুড় থেকে।
এমন পরিস্থিতিতে দেশের সকল হাসপাতালে আলাদা বেড ও আইসিইউ প্রস্তুত রাখতে বলেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নিপাহ ভাইরাস থেকে বাঁচতে খেজুরের কাঁচা রস না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এই ভাইরাসে আক্রান্তদের কাছে যাওয়ার সময় মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। কারণ নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধে কোন ওষুধ না থাকায় আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুহার প্রায় ৮০ শতাংশ।
নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আর এমও ) সামিউল ইসলাম শান্ত বলেন , নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে প্রাথমিকভাবে মাথাব্যথা, খিঁচুনি, গা ব্যথা, ঘাড় ও পিঠ শক্ত হয়ে যাওয়া, বমিবমি ভাব এবং গলাব্যথা হতে পারে। এরপর আক্রান্ত ব্যক্তি প্রলাপ বকা শুরু করতে পারে। রোগী আলো সহ্য করতে পারে না। কখনো কখনো অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। পরিস্থিতির অবনতি হলে হঠাৎ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়া অথবা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হও।
নিপাহ ভাইরাস মূলত খেজুরের কাঁচা রস পান করেই আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনাগুলো বেশি ঘটে। কারণ এ রসে বাদুড়ে মুখ দেয়। যেহেতু এ ভাইরাস বাদুড়ের মাধ্যমে ছড়ায় তাই খেজুর রসে বাদুড় মুখ দেয়ার কারণেই সেখান থেকে মানবদেহে ছড়ায়। নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরও মৃত্যুর হাত থেকে যারা ফিরে আসেন, তাদের জন্য এক ভয়াবহ সময় অপেক্ষা করে। বেঁচে থেকেও তারা স্মৃতি হারিয়ে ফেলতে পারেন এবং চিরতরে পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন।
নাটোরের সিভিল সার্জন ড. রোজী আরা খাতুন জানান, ২৮টি জেলায় নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে। তাই জনসচেতনতা তৈরিতে প্রচারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। বলেন, কাঁচা রস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে মসজিদে মাইকিং করার পাশাপাশি বিভিন্ন ক্লিনিকে হেলথ এডুকেশন দেয়া হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের মানুষদের সতর্ক করার জন্য আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন।
নাটোর স্টেশন বাজার এলাকার ব্যবসায়ী অমিরুল ইসলাম বলেন, গ্রামের এবং শহরের সাধারণ মানুষ প্রতিদিনই কাঁচা খেজুরের রস খায়। নিপাহ ভাইরাসের সতর্কতামূলক স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো প্রচারণা আজও চোখে পড়েনি।
সচেতনমহল মনে করেন নিপাহ ভাইরাসের বিষয়ে জনগণকে আরোও সচেতন করতে ব্যাপকভাবে মাইকিং, লিফলেট বিতরণ করা উচিত।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com