ডেস্ক রির্পোট:- দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা এখন ১০৯টি। কিন্তু এদের মধ্যে মাত্র ৩৩টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বাকি ৭৬ বিশ্ববিদ্যালয়ই ভাড়া বাড়ি বা অস্থায়ী ক্যাম্পাসে পরিচালিত হচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১২ বছরের মধ্যে নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে সব কার্যক্রম স্থানান্তরের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর প্রায় দুই যুগ হতে চললেও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় রহস্যজনক কারণে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দফায় দফায় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে চিঠি দেওয়া হলেও তারা কর্ণপাত করেনি। বছরের পর বছর নানা অজুহাত দেখিয়ে অস্থায়ী ভবন বা বাসা-বাড়িতেই ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
তবে স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়ার কারণে দীর্ঘ বছর পরে ব্যবস্থা নিয়েছে ইউজিসি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ছয় বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুন শিক্ষার্থী বন্ধ করতে বলেছে সংস্থাটি। আর সময় বেঁধে দিয়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসে না গেলে শিক্ষার্থী বন্ধের আলটিমেটাম দিয়েছে আরও ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়কে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব ড. ফেরদৌস জামান গতকাল প্রতিবেদককে বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সত্য যে, প্রতিষ্ঠার ২০-২২ বছর পেরিয়ে গেলেও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেনি। অনেকের যাওয়ার মতো সক্ষমতা রয়েছে কিন্তু যাচ্ছে না, এটা একটি দুঃখজনক বিষয়। তাই তাদের নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে ফের সময় দিলে আর কখনই তারা স্থায়ী অবকাঠামোতে যাবে না। উচ্চশিক্ষায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতেই এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
ইউজিসি সূত্র জানায়, আশা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ২০ বছরের বেশি সময় ধরে অস্থায়ী ঠিকানায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। স্থায়ী ক্যাম্পাসে না গেলেও কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকা বিদেশে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে বলেও জানায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রটি।
ইউজিসির তথ্যমতে, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া ও ক্যাম্পাস নির্মাণে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটি, আশা ইউনিভার্সিটি ও ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটিসহ দেশের চারটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রোগ্রামে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ থাকবে স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে।
স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রমসহ সম্পূর্ণ কার্যক্রম স্থানান্তরে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে ছয় বিশ্ববিদ্যালয়কে। এগুলো হলো- ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, সিটি ইউনিভার্সিটি, দ্য মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রমসহ সব কার্যক্রম চালু করতে ব্যর্থ হলে ১ এপ্রিল থেকে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ থাকবে। আর আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, গ্রিন ইউনিভার্সিটি, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি এবং দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটিকে। লিখিত অঙ্গীকার বিবেচনায় স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রমসহ সম্পূর্ণ কার্যক্রম স্থানান্তরে এই সময় দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে না পারলে ১ জুলাই থেকে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখার আলটিমেটাম দিয়েছে ইউজিসি।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান সম্প্রতি প্রতিবেদককে বলেন, অনেক আগ থেকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে ১০৯টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। অথচ মানের দিক দিয়ে চিন্তা করলে ২০ থেকে ২৫টির বেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থাকা উচিত নয়। আর অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। ইউজিসি প্রাণপণ চেষ্টা করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়মের মধ্যে রাখতে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সময়মতো সহযোগিতা না পাওয়ায় এটি সব সময় সম্ভব হয় নয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য ইউজিসির ক্ষমতায়ন বা শিক্ষাবিদদের নেতৃত্বে একটি উচ্চশিক্ষা কমিশন করার পক্ষে মত দেন তিনি।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com